স্বপ্ন দেখো, কাজ করো, জিতে যাও: জেফ বেজোসের অ্যামাজন সাম্রাজ্য
স্বপ্ন দেখো, কাজ করো, জিতে যাও: জেফ বেজোসের অ্যামাজন সাম্রাজ্য
-
মোঃ জয়নাল আবেদীন
“আকাশের তারা, বইয়ের পাতা আর মায়ের স্নেহ— এখান থেকেই শুরু হয়েছিল এক কিংবদন্তির গল্প।”
১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলবুকার্কি, নিউ মেক্সিকোতে একটি সাধারণ হাসপাতালের কক্ষে জন্ম নেন এক শিশু,
যার নাম রাখা হয় জেফ্রি প্রেস্টন জর্গেনসেন (Jeffrey Preston Jorgensen)।তার মা জ্যাকলিন গিস জর্গেনসেন, বয়স তখন মাত্র ১৭ বছর, আর বাবা টেড জর্গেনসেন, একজন তরুণ সাইকেল দোকানের মালিক।
তাদের সংসার ছিল খুব সাধারণ— তবুও মা জ্যাকলিনের চোখে এক দৃঢ়তা, “আমার ছেলেকে আমি শিক্ষিত করব, বড় কিছু করব।”কিন্তু জীবন সব সময় সহজ নয়— বাবা-মায়ের সম্পর্কে ধীরে ধীরে ফাটল ধরতে থাকে। জেফ যখন মাত্র ১ বছর বয়সী,তখনই তারা আলাদা হয়ে যান।
১৯৬৮ সালে জ্যাকলিন বিয়ে করেন এক কিউবান অভিবাসী যুবককে — মিগেল “মাইক” বেজোস।
তিনি জেফকে নিজের ছেলের মতো লালন করেন।
এরপরেই জেফের নাম পরিবর্তন করা হয় — জেফ্রি প্রেস্টন বেজোস।এই পরিবারে ভালোবাসা ছিল, কিন্তু অর্থ ছিল না বেশি।তবুও তারা শিক্ষা ও পরিশ্রমে বিশ্বাস করতেন।
জেফের শৈশব কেটেছে হিউস্টন, টেক্সাসে —
যেখানে তার সৎ বাবা NASA-র এক প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন।বাল্যকালে জেফ অসাধারণ কৌতূহলী ছিল। খেলনা খুলে ভেতরের যন্ত্রাংশ বের করে দেখত কীভাবে কাজ করে। মা জ্যাকলিন মৃদু হাসি দিয়ে বলতেন— “এই ছেলে একদিন পুরো পৃথিবী খুলে দেখবে।”
জেফের বয়স তখন ৬। প্রতিদিন রাতে সে ঘুমানোর আগে পড়ত বিজ্ঞান কল্পকাহিনি (Science Fiction) বই— আইজাক আসিমভ, জুল ভের্ন, ও রে ব্র্যাডবারির গল্প। এই বইগুলোই তার কল্পনাশক্তিকে আকাশচুম্বী করে তোলে।একবার স্কুলের শিক্ষক তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?” সে উত্তর দিয়েছিল—
“আমি এমন একটি জিনিস বানাতে চাই, যেটা পৃথিবীর বাইরে কাজ করবে!”
ছোটবেলা থেকেই তার চোখে ছিল মহাকাশের স্বপ্ন।
সে ভালোবাসত NASA-র মহাকাশ অভিযান দেখা,
আর প্রায়ই বলত— “আমি একদিন মহাকাশে যাব।”
প্রতিটি গ্রীষ্মে জেফ যেত তার দাদু লরেন্স গিস-এর খামারে, যা ছিল কোটুলা, টেক্সাসে।দাদু ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত Atomic Energy Commission-এর কর্মকর্তা— জ্ঞানী, শান্ত ও ধৈর্যশীল। তিনি জেফকে শেখাতেন হাতে-কলমে কাজ করতে— ভাঙা পাইপ মেরামত, গরুর যত্ন নেওয়া, এমনকি ট্রাক্টর সারানো পর্যন্ত।
দাদু বলতেন, “যে সমস্যাকে ভয় পায় না,
সেই-ই একদিন পৃথিবী বদলায়।”এই সময়েই জেফ বুঝে যায়— সমস্যা মানেই শেখার সুযোগ।
এই শিক্ষা তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে পথ দেখিয়েছে।
হাইস্কুলে উঠেই জেফ ছিল সবার থেকে আলাদা।
সে নিজের হাতে বানায় অ্যালার্ম সিস্টেম, যাতে ভাই-বোনেরা তার ঘরে ঢুকলেই বেজে ওঠে! সে বিজ্ঞান মেলাতে তৈরি করে সৌরশক্তি চালিত চুল্লি ও বায়ু শক্তি সংরক্ষণ যন্ত্র। স্কুলের শিক্ষকরা বলতেন, “এই ছেলেটা কেবল মেধাবী নয়, কল্পনাশক্তির দিক থেকেও বিস্ময়কর।”
১৯৮০ সালের দিকে,জেফ সিদ্ধান্ত নেয়— সে জীবনে শুধু চাকরি করবে না,সে নতুন কিছু সৃষ্টি করবে।তার দাদুর খামার, মায়ের অনুপ্রেরণা, আর বইয়ের ভেতর পাওয়া স্বপ্ন— সব মিলে গড়ে উঠছিল এক “জেফ বেজোস”, যে একদিন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অনলাইন সাম্রাজ্য গড়ে তুলবে— Amazon।
১৯৮১ সালে, বয়স তখন ১৭, জেফ বেজোস ভর্তি হলেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি পড়াশোনা করলেন কম্পিউটার সায়েন্স এবং ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ। প্রিন্সটনে তার মেধা ও কৌতূহল সবাইকে মুগ্ধ করত। ছাত্রজীবনে সে বানিয়েছিল—কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রোজেক্ট, ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম।ছোট ছোট উদ্ভাবনী যন্ত্র, যা সহপাঠীদের মধ্যে চমক তৈরি করততাঁর প্রিন্সটনের প্রফেসররা বলতেন,“জেফ শুধু মেধাবী নয়, তার দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি ভবিষ্যতের দিকে।”
স্নাতক শেষ করে জেফ শুরু করলেন ফিনান্স ও প্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি।প্রথমে ফিটচে, ফ্যামিলি & কোম্পানি-তে চাকরি। পরে বেল স্ট্রিটের ব্যাঙ্কিং ও Wall Street-এ কাজ।এসময় তিনি শিখলেন— কিভাবে বড় বড় তথ্য বিশ্লেষণ করতে হয়। প্রযুক্তি ও ব্যবসার মধ্যে সমন্বয় কেমন হয়। নতুন ধারণা বাস্তবায়ন করতে কেমন নেতৃত্ব দরকার
একই সময়ই তার মাথায় জন্ম নিল ইন্টারনেট ও অনলাইন ব্যবসার ধারণা। ১৯৯০ সালে, যখন ইন্টারনেট শুরু হচ্ছে, জেফ ভাবলেন, “একদিন মানুষ ঘরে বসে সবকিছু কিনবে—বই, সঙ্গীত, প্রোডাক্ট।আর এই বিপ্লব হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবসা।”
১৯৯১ সালে জেফ অঙ্গীকার করলেন, তিনি Wall Street-এ চাকরি ছেড়ে নিজের স্বপ্ন অনুসরণ করবেন। ডেট্রয়েট থেকে সিয়াটল পর্যন্ত চলে আসলেন, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার ক্রমশ বেড়ে চলছিল।
১৯৯৪ সালে, তিনি ছোট একটি গ্যারেজ ভাড়া নিলেন এবং শুরু করলেন Amazon.com—প্রথম নাম ছিল Cadabra, Inc. গ্যারেজের অন্ধকার কোণে, কম্পিউটার, টেবিল আর কাগজের স্তূপে জেগে উঠল নতুন যুগের বীজ।“আমি এমন কিছু তৈরি করতে চাই যা মানুষকে বই থেকে শুরু করে সবকিছু অনলাইনে এনে দেবে। মানুষ ঘরে বসেই নিজের জীবনকে সহজ করে তুলবে।”
এই গ্যারেজেই প্রথম লেখা হলো Amazon-এর ওয়েবসাইটের কোড।প্রথম ক্রেতা আসল ১৯৯৫ সালে— আর তারপর বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স বিপ্লব শুরু হলো।
১৯৯৫ সালের জুলাই মাস। সিয়াটলের এক ছোট অ্যাপার্টমেন্টের কোণটি তখন Amazon-এর প্রথম অফিস। চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে বইয়ের প্যাকেট, খালি বাক্স, ল্যাপটপ, এবং কিছু পুরনো ডেস্ক। এখানে বসে বসে জেফ বেজোস ভাবছিলেন—“আমরা খুব ছোট থেকে শুরু করেছি, কিন্তু একদিন এই ছোট উদ্যোগ বিশ্বজয় করবে।”
প্রথম দিনগুলো সহজ ছিল না। হাতে কাজের অভিজ্ঞতা কম, বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস ছিল দাগা দাগা। প্রতিদিন সকালে জেফ নিজেই বই প্যাক করত, ডেলিভারি ঠিকানা পরীক্ষা করত এবং গ্রাহকের অর্ডার ট্র্যাক করত।
একদিন রাতে, ঘুমের আগে তার বন্ধু মিগেল বলল, “জেফ, তুমি কি জানো কত ঝুঁকির মধ্যে পড়েছো? এই ছোট অ্যাপার্টমেন্টে বসে অনলাইন ব্যবসা চালানো, সত্যিই সম্ভব হবে কি?” জেফ হেসে বললেন, “আমি জানি, এটা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি—যারা আগে স্বপ্ন দেখেছে, তারা জিতেছে। আমাদের লক্ষ্য শুধু বিক্রি নয়, মানুষের জীবনকে সহজ করা।”
প্রথম অর্ডারটি যখন পাঠানো হলো, তখন পুরো অফিসের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল। এটি শুধু একটি বইয়ের ডেলিভারি ছিল না—এটি ছিল স্বপ্নের প্রথম বাস্তব রূপ।
দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল, কিন্তু চ্যালেঞ্জও বাড়ছিল। অনেক সময় কম্পিউটার ক্র্যাশ করত, প্যাকেজ ভুল ঠিকানায় যেত, গ্রাহক অভিযোগ করত। কেউ হতাশ হলে, জেফ বলত, “প্রতিটি সমস্যা হলো শেখার সুযোগ। আমরা ব্যর্থতা থেকে শক্তিশালী হই।”
এভাবেই ১৯৯৭ সালের দিকে Amazon ধীরে ধীরে সঠিক পথে এগোতে শুরু করল। এই সময়ে জেফ দেখালেন—ছোট থেকেই শুরু করা যায়, যদি মনোবল, উদ্ভাবনী চিন্তা এবং কঠোর পরিশ্রম থাকে।
১৯৯৮ সাল। Amazon.com শুধুমাত্র একটি ছোট অনলাইন বুকস্টোর নয়—এটি ছিল জেফ বেজোসের স্বপ্নের বড় ধাপ। বই বিক্রির সফলতার পর, জেফ বুঝলেন, শুধু বই নয়, মানুষ চাইছে আরও সহজ, দ্রুত এবং বৈচিত্র্যময় পণ্য। তিনি বললেন, “আমরা শুধু ব্যবসা করছি না, আমরা মানুষের জীবনকে আরও সহজ করছি।”
প্রথম পদক্ষেপে, ১৯৯৮ সালে Amazon-এ যোগ হলো সঙ্গীত এবং ভিডিও। কম সময়ে সিয়াটলের ছোট অ্যাপার্টমেন্টটি পরিণত হলো প্যাকেজিং এবং লজিস্টিক হাব-এ। প্রতিটি প্যাকেজ ছিল শুধু একটি পণ্য নয়, গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো স্বপ্নের প্রতীক।
২০০০ সালের দিকে, Amazon-কে রূপান্তরিত করা হলো বহুপ্রোডাক্ট অনলাইন মার্কেটপ্লেসে। ইলেকট্রনিক্স, খেলনা, পোশাক, বাড়ির জিনিসপত্র— সবই যুক্ত হলো। তবে চ্যালেঞ্জও ছিল বিপুল। প্রতিযোগীরা উপহাস করত, বিনিয়োগকারীরা সন্দেহ করত।
একদিন জেফ তার টিমকে বললেন, “আমরা এখানে শুধু বিক্রি করতে আসিনি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের জীবন সহজ করা, তাদের বিশ্বাস অর্জন করা। ব্যর্থতা আমাদের শেখাবে, আর উদ্ভাবন আমাদের এগোতে দেবে।”
২০০৫ সালে Amazon চালু করল Prime সার্ভিস। এটি কেবল দ্রুত ডেলিভারি নয়, স্ট্রিমিং এবং অন্যান্য সুবিধা যুক্ত করে গ্রাহকের জীবন আরও সহজ করে তুলল। Prime ছিল গ্রাহক-কেন্দ্রিক বিপ্লব, যা Amazon-কে অন্যান্য প্রতিযোগীর থেকে আলাদা করল।
জেফ বেজোস দেখালেন, ছোট উদ্যোগও সঠিক দিকনির্দেশনা, উদ্ভাবনী চিন্তা এবং কঠোর পরিশ্রম থাকলে বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলতে পারে। Amazon-এর বিপ্লব শুধু ব্যবসায়িক সাফল্য নয়, এটি ছিল প্রযুক্তি, লজিস্টিক এবং গ্রাহকসেবার এক অনন্য মেলবন্ধন, যা পুরো শিল্পকৌশলকেই বদলে দিল।
২০০৬ সালের শীতের এক সন্ধ্যা, সিয়াটলের অফিসের ছোট কক্ষে জেফ বেজোস বসে আছেন।
তার চোখে জ্বলজ্বল করছে এক নতুন ধারণার আলো।তিনি ভাবছেন—“ইন্টারনেট শুধু কেনাকাটার জায়গা নয়, এটি বিশ্বের তথ্য সংরক্ষণের জায়গা হতে পারে।
একটি প্ল্যাটফর্ম বানাব যা যেকোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারবে— সার্ভার, ডেটা স্টোরেজ, কম্পিউটিং— সবই অনলাইন।” ফলে জন্ম হলো Amazon Web Services (AWS)। শুরুতে কয়েকটি ছোট কোম্পানি ব্যবহার করলেও, ধীরে ধীরে এটি পৃথিবীর ডিজিটাল অবকাঠামোর ভিত্তি হয়ে উঠল।
২০০৭ সালের নভেম্বর, জেফ একটি ছোট চমকপ্রদ যন্ত্র উন্মোচন করলেন। “পড়ো যেখানে চাও, বই পকেটে নাও।” Kindle নামের ই-বুক রিডারটি ধীরে ধীরে পাঠকদের জীবন বদলে দিল। একজন গ্রাহক রাতের বেলা ট্রেনের সিটে বসে পড়তে পারছিল
আরেকজন ঘরে বসে নতুন বই কিনছিল মিনিটের মধ্যে।জেফ বললেন,“আমরা বইকে শুধু বিক্রি করি না, আমরা মানুষের পড়ার অভ্যাসকে নতুন করে গড়ে দিচ্ছি।”
২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও Amazon মন্দাকে সুযোগে পরিণত করল। তার উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, দ্রুত ডেলিভারি, ক্লাউড কম্পিউটিং—Amazon Web Services (AWS)—পুরো প্রযুক্তি শিল্পে বিপ্লব আনল।
২০১০ সালে Amazon Prime চালু হলো।দ্রুত ডেলিভারি, একক সাবস্ক্রিপশন দিয়ে হাজারো সুবিধা। গ্রাহকরা অবাক— “একদিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছে যাবে?”এই সময় জেফ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করলেন, “গ্রাহক সন্তুষ্টি আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ।”
একই সময়ে, Amazon আন্তর্জাতিকভাবে প্রসারিত হলো। ইউরোপ, এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকায় অফিস ও ওয়্যারহাউস খুলল। গ্যারেজের সেই ছোট্ট স্বপ্ন ধীরে ধীরে বিশ্বজয়ী সাম্রাজ্যে পরিণত হলো।
জেফ বেজোসের ছোটবেলার স্বপ্ন— মহাকাশে যাওয়া, এবার বাস্তবায়ন শুরু হলো। ২০০০ সালে যাত্রা শুরু হলেও, ২০১৩–২০১৫ সালের মধ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন Blue Origin।মহাকাশযান তৈরি,রকেট পরীক্ষা,ভবিষ্যতের মহাকাশ পর্যটনের পরিকল্পনা।
জেফ বললেন, “পৃথিবী সীমিত। মানুষের ভবিষ্যৎ মহাকাশে।” এই স্বপ্ন তাকে আবার ছোটবেলার সেই কৌতূহলপ্রবণ ছেলেকে মনে করিয়ে দিল— যে ঘরে বসে বই পড়ত, যন্ত্র খুলত, মহাকাশের দিকে তাকাত।
২০১৬ সালে, Amazon বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন রিটেইলার হিসেবে স্বীকৃতি পেল। ২০১৮ সালে, জেফ বেজোস বিশ্বের ধনী মানুষের তালিকায় শীর্ষে আসলেন। তিনি নতুন উদ্যোগে বিনিয়োগ করলেন—AI, রোবোটিক্স, স্বয়ংক্রিয় ডেলিভারি, এবং ভয়েস-সহায়ক Alexa।
তবে জেফ বললেন,“অর্থ কেবল একটি সংখ্যাই; গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের জীবন সহজ করা।”এই সময়েও তিনি প্রতিদিন অফিসে আসতেন, নতুন প্রোডাক্ট পরীক্ষা করতেন,কারণ তার বিশ্বাস—
যদি স্বপ্ন বড় হয়, শ্রমও বড় হতে হবে।
জেফের জীবনের সবচেয়ে নাটকীয় দিনটি আসে ২০ জুলাই ২০২১। Blue Origin-এর New Shepard রকেটে বসে তিনি মহাকাশে যাত্রা করেন।মহাকাশ থেকে পৃথিবী দেখলেন—নীল গ্রহ, ছায়াপথের অসীম বিস্তার, আর তার ছোট্ট গ্যারেজের স্বপ্নের পথচিহ্ন মনে হলো।
জেফ চোখে টিপে ধরলেন সেই ছোট্ট বালকের স্বপ্ন— যিনি ভাবতেন,“একদিন মানুষ ঘরে বসে সবকিছু কিনবে। একদিন মানুষ মহাকাশের সীমা ছুঁবে।”এবার, সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে— Amazon এবং Blue Origin, দুই-ই বিশ্বজয়ী প্রতীক।
আজ, Amazon কেবল একটি কোম্পানি নয়, বরং একটি বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্য। গ্রাহক, ব্যবসা, প্রযুক্তি—সব ক্ষেত্রেই Amazon-এর প্রভাব আছে। জেফ বেজোস দেখিয়েছেন, একজন উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তা যদি স্বপ্ন দেখে, কঠোর পরিশ্রম করে এবং ঝুঁকি নিতে সাহস করে, তবে পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে সাফল্য অর্জন সম্ভব।
জেফ বেজোস প্রমাণ করলেন—স্বপ্ন দেখো, কাজ করো, জিতে যাও।ছোট শুরু করলেও, বড় দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে বিশ্বজয় সম্ভব। ব্যর্থতাকে শেখার সুযোগ মনে করা উচিত। উদ্ভাবনী মনোভাব ও ধৈর্য দিয়ে সব অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।
একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্টের কোণ থেকে শুরু হওয়া Amazon আজ প্রমাণ করে—সাহসী স্বপ্নই পৃথিবী বদলে দিতে পারে।