ড্রাইভিং কে পেশা হিসেবে নিতে লজ্জা পাই।
ড্রাইভিংকে পেশা হিসেবে নিতে লজ্জা পাই!
লেখক: মোঃ জয়নাল আবেদীন
বর্তমানে দেশে শিক্ষিত বেকার যুবকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন অনেক তরুণ। অথচ, আমাদের আশপাশেই রয়েছে কিছু পেশা, যেগুলো সম্মানজনক হলেও সমাজের চোখে ‘কম মর্যাদার’ বলে বিবেচিত হয়। তেমনই একটি পেশা হলো ড্রাইভিং।
এই লেখার উদ্দেশ্য হলো—ড্রাইভিংকে ঘিরে প্রচলিত ভুল ধারণা দূর করা এবং এটি একটি সম্ভাবনাময় পেশা হিসেবে তুলে ধরা।
সড়ক দুর্ঘটনার কয়েকটি মূল কারণ
আমরা প্রায় প্রতিদিনই খবরের কাগজে সড়ক দুর্ঘটনার খবর দেখি। এর পেছনে রয়েছে নানা কারণ, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
১. ড্রাইভারের অপেশাদার আচরণ:
অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো
ক্লান্ত বা ঘুম চোখে গাড়ি চালানো
অপ্রয়োজনে ও বেপরোয়াভাবে ওভারটেকিং করা
প্রয়োজনের অতিরিক্ত যাত্রী বা মাল বহন করা
২. অবকাঠামোগত সমস্যা:
রাস্তাগুলোর প্রস্থ প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়া
ফিটনেসবিহীন গাড়ির অবাধ চলাচল
এ সমস্যাগুলোর সমাধানে প্রশিক্ষিত ও সচেতন ড্রাইভারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ড্রাইভিংকে পেশা হিসেবে নেওয়ার প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এখনও ড্রাইভিংকে ‘শিক্ষিতদের পেশা’ হিসেবে দেখা হয় না। কেউ যদি এসএসসি, এইচএসসি বা ডিগ্রি পাস করে ড্রাইভার হতে চায়, তখন অনেকে হাসাহাসি করে বলেন, “চাকরি পেলে না যে ড্রাইভার হতে হলে?”
এই দৃষ্টিভঙ্গি ভুল।
বিদেশে, বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় বহু শিক্ষিত যুবক প্রশিক্ষণ নিয়ে ড্রাইভিং পেশায় যুক্ত হচ্ছেন এবং সফলভাবে জীবনযাপন করছেন। আমার নিজের পরিচিত কয়েকজন ক্লাসমেট ইউরোপে গিয়েছেন এবং সেখানকার পরিবহন খাতে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করে ভালো আয় করছেন, গর্বের সঙ্গে জীবন কাটাচ্ছেন।
তাদের মধ্যে একজন তো বলেছিলেন, “এখানে কেউ পেশা নিয়ে বিচার করে না, বিচার করে কাজের দক্ষতা আর সততা।”
ড্রাইভিং পেশার আর্থিক সম্ভাবনাঃ-
আমাদের দেশের শহরগুলোতে একজন দক্ষ ড্রাইভারের বেতন শুরু হয় ১০,০০০ টাকা থেকে এবং তা ৩০,০০০ টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফ্যামিলি ড্রাইভার, কর্পোরেট ড্রাইভার বা রাইড-শেয়ারিং অ্যাপভিত্তিক ড্রাইভারদের আয়ে পরিবর্তন এসেছে।
শুধু বেতনের ওপর নির্ভর না করে অনেকে নিজেই গাড়ি কিনে চালিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। চাহিদা আছে, সুযোগও আছে—শুধু দরকার মানসিক প্রস্তুতি ও পেশার প্রতি সম্মান।
লেখকের অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনাঃ-
আমি নিজেও একজন ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালক। গাড়ি চালাতে পারি, জানি। আমি সবসময় ভাবি, যদি আমার চাকরি কখনো আর ভালো না লাগে, তাহলে আমি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে একটি গাড়ি কিনে নিজে চালাবো। তারপর সেই গাড়ির আয়ে আরেকটি গাড়ি কিনবো। সেখান থেকে আরও একধাপ এগোবো।
একটি গাড়ি থেকে দুটি, দুটি থেকে তিনটি... এভাবেই একটি ছোট উদ্যোগ একদিন বড় ব্যবসায় রূপ নিতে পারে।
উপসংহারঃ-
সুতরাং, সময় এসেছে মানসিকতা বদলানোর। আমরা প্রতিটি পেশার প্রতি সম্মান জানাই। একজন ডাক্তার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি একজন সৎ ও দক্ষ ড্রাইভারও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তার হাতে মানুষের জীবন নিরাপদ।
আসুন, শিক্ষিত তরুণরা ড্রাইভিংসহ অন্যান্য দক্ষভিত্তিক পেশায় আগ্রহী হন। প্রশিক্ষণ নিন, আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যান। কারণ, কোনো কাজই ছোট নয়—ছোট হতে পারে কেবল আমাদের চিন্তা।
শেষ কথা:
আপনি যদি সত্যি কাজ করতে চান, সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চান—তবে সমাজের কথা নয়, নিজের মর্যাদাকেই প্রাধান্য দিন।