রাশিয়ান ভাষার শ্রেষ্ঠ গল্প সমূহ
গল্পের নাম: সান্তা ক্লজের বুটজোড়া
মূল লেখক: ফিওদর দস্তইয়েভস্কি (Fyodor Dostoevsky)
অনুবাদ ও উপস্থাপন: মোঃ জয়নাল আবেদীন
১. শীতের গল্পের শুরু
এক ভয়ানক শীতের রাত, পেতার্সবুর্গ শহরের গলির মধ্যে হাঁটছিল এক ছোট ছেলে। বয়স বড়জোর আট। তার গায়ে ছিল ছেঁড়া জামা, পায়ে কোনো জুতা নেই, আর ঠাণ্ডায় তার ছোট্ট হাত দুটি নীল হয়ে গিয়েছে।
সে জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল—বাড়ির ভেতরে উষ্ণতা, আলো, হাসি, উৎসব আর খাবারের বাহার।
কিন্তু তার জন্য কিছুই ছিল না।
সে হঠাৎ ভাবল, “সান্তা ক্লজ কি সত্যিই আসে?”
তার ছোট্ট মনে প্রশ্ন—“আমার জন্য কিছু নিয়ে আসবে সে?”
২. ছোট্ট ছেলেটির স্বপ্ন
শীতের রাতে, না খেয়ে, না ঘুমিয়ে সে একটি গুদামের পাশে বসে পড়ল। ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে সে ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের মধ্যে সে স্বপ্ন দেখল—
এক সাদা দাড়িওয়ালা লোক তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। গায়ে লাল কাপড়, কাঁধে বস্তা।
লোকটি বলল,
“আমি সান্তা নই, আমি ঈশ্বরের দূত। তুমি আর কষ্ট পাবে না।”
ছেলেটি দেখল, সে এক উষ্ণ ঘরে আছে। সেখানে খেলনা, খাবার, আর পাশে এক মা—যে তাকে জড়িয়ে ধরেছে।
৩. বাস্তবতা ও বেদনা
পরদিন সকালে পত্রিকায় ছোট্ট একটি খবর ছাপা হয়—
“রাতের ঠাণ্ডায় এক ছেলেশিশুর মৃত্যু।”
লোকেরা দু’দণ্ড থেমে পড়ে খবরটি পড়ে, তারপর তাদের জীবনে ফিরে যায়।
দস্তইয়েভস্কির ভাষ্যে
এই সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর গল্পটি রাশিয়ার মহান ঔপন্যাসিক ফিওদর দস্তইয়েভস্কি রচনা করেন, যাতে ফুটে ওঠে সমাজের অবহেলিত শিশুদের দুর্দশা, আমাদের সহানুভূতির অভাব, এবং ঈশ্বরের করুণা।
দস্তইয়েভস্কির গল্পে বারবার উঠে আসে—ভোগ নয়, সহানুভূতি মানুষের সত্যিকারের পরিচয়।
শিক্ষা:
এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একটি ছোট উপহার, একটি ভালোবাসার স্পর্শ, একটুখানি সময়—এগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সত্যিকারের মানবতা।
গল্প:- ভাসিলিসা দ্য বিউটিফুল
লেখক/সংগ্রহকারী: আলেকজান্ডার আফানাস্যেভ (Alexander Afanasyev)
অনুবাদ ও উপস্থাপন: মোঃ জয়নাল আবেদীন
রাশিয়ার এক গ্রামে বাস করত এক ধনী ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রী। তাদের একমাত্র মেয়ে ভাসিলিসা জন্মের পর থেকেই ছিল অসাধারণ সুন্দরী। সবাই তাকে ডাকত ভাসিলিসা দ্য বিউটিফুল। কিন্তু ভাগ্যের খেলায়, সে যখন মাত্র আট বছর বয়সী, তখন তার মা অসুস্থ হয়ে মারা যান। মৃত্যুর আগে মা তাকে একটি ছোট কাঠের পুতুল দেন। মা বলেছিলেন—
“মা, যখনই কষ্টে পড়বে, এই পুতুলকে খাওয়াবে, কথা বলবে—এটি তোমাকে সাহায্য করবে।”
মায়ের মৃত্যুর পর কিছুদিন শান্তি থাকলেও, এক সময় ভাসিলিসার বাবা আবার বিয়ে করলেন। নতুন সৎমা ও সৎবোনেরা ছিল নিষ্ঠুর ও হিংসুক। তারা ভাসিলিসাকে সারাদিন কষ্টের কাজ করাত, সুন্দর কাপড় পরতে দিত না, ভালো খাবার খেতে দিত না।
একদিন বাবা ব্যবসার কাজে দূরে চলে গেলেন। তখন সৎমা কূটচাল করল—ভাসিলিসাকে এক অন্ধকার বনে পাঠিয়ে দিল আগুন আনতে, কিন্তু সেই আগুন আনতে হবে ভয়ঙ্কর ডাইনী বাবা ইয়াগা-র কাছ থেকে। গ্রামের সবাই জানত, বাবা ইয়াগা মানুষের মাংস খায়!
ভাসিলিসা ভয় পেলেও মায়ের দেওয়া পুতুলকে খাবার খাইয়ে সাহায্য চাইল। পুতুল তাকে সাহস দিল এবং বলল কিভাবে বাবা ইয়াগার বাড়ি খুঁজে পেতে হবে।
বাবা ইয়াগার সঙ্গে দেখা
বনের গভীরে দাঁড়িয়ে ছিল এক ভয়ঙ্কর বাড়ি, মুরগির পায়ের ওপর ঘুরছে—এটাই বাবা ইয়াগার ঘর! বাড়ির চারপাশে ছিল মানুষের খুলির বেড়া, যার চোখে জ্বলছিল আগুন। বাবা ইয়াগা ভাসিলিসাকে দেখে হাসল—
“তুমি আমার কাছে কী চাও, সুন্দরী মেয়ে?”
ভাসিলিসা বলল, “আমার পরিবার আগুন চায়, তাই এসেছি।”
বাবা ইয়াগা শর্ত দিল—আগুন পেতে হলে তাকে তিনটি কঠিন কাজ করতে হবে:
• ঘর পরিষ্কার করা
• প্রচুর খাবার রান্না করা
• অগণিত শস্য বীজ আলাদা করা
ভাসিলিসা মন খারাপ করে পুতুলকে খাওয়াল। পুতুল জাদুর মতো সব কাজ শেষ করে দিল। বাবা ইয়াগা অবাক হল, কিন্তু কিছু বুঝতে না পেরে বলল—
“তুমি বুদ্ধিমতী, সাহসী। নাও, আগুন নিয়ে যাও।”
সে একটি খুলির ভেতরে জ্বলন্ত আগুন দিয়ে দিল।
ভাসিলিসার প্রত্যাবর্তন
ভাসিলিসা আগুন নিয়ে বাড়ি ফিরল। কিন্তু আশ্চর্য! বাড়িতে ঢুকতেই খুলির আগুন জ্বলতে শুরু করল এবং তার সৎমা ও সৎবোনদের পুড়িয়ে ছাই করে দিল। এভাবে ভাসিলিসা নিষ্ঠুরতার হাত থেকে মুক্তি পেল।
পরে সে শহরে চলে গেল, একজন বৃদ্ধার সঙ্গে থাকতে লাগল। নিজের হাতে সুন্দর কাপড় বুনে বিক্রি করত। তার বুদ্ধি ও সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত। একদিন রাজপুত্র তার বোনা কাপড় দেখে মুগ্ধ হলেন, ভাসিলিসার সঙ্গে দেখা করলেন এবং তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। ভাসিলিসা রাজি হল, আর তারা সুখে শান্তিতে থাকতে লাগল।
গল্পের শিক্ষা
• ধৈর্য ও সদাচরণ সব বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করে।
• মায়ের আশীর্বাদ বা বড়দের উপদেশ জীবনের কঠিন মুহূর্তে অমূল্য সহায়ক।
• সাহসী ও বুদ্ধিমান মানুষ শেষ পর্যন্ত সাফল্য ও শান্তি পায়।
গল্পের নাম: সত্যের শক্তি (Сила правды)
লেখক: আন্তন চেখভ (Антон Чехов)
অনুবাদ ও উপস্থাপন: মোঃ জয়নাল আবেদীন
একটি ছোট শহরে দুই বন্ধু থাকত—পাভেল ও দিমিত্রি।
পাভেল ছিল সৎ, পরিশ্রমী, আর দিমিত্রি ছিল বুদ্ধিমান কিন্তু সবসময় সহজ পথে লাভ করতে চাইত।
একদিন শহরে খবর ছড়িয়ে পড়ল যে, কারো কাছে রাজপ্রাসাদের একটি হারানো সোনার আংটি আছে, যার জন্য বড় পুরস্কার ঘোষণা হয়েছে।
দিমিত্রি ফিসফিস করে পাভেলকে বলল—
"শোন, চল একটা কৌশল করি। আমরা বাজার থেকে পুরনো একটা আংটি কিনে রাজপ্রাসাদের লোকদের বলব, এটা সেই আংটি। টাকা পেলে ভাগ করে নেব।"
পাভেল সঙ্গে সঙ্গে না বলল—
"দিমিত্রি, মিথ্যা বলে টাকা রোজগার হয়তো দ্রুত হবে, কিন্তু তার ফল ভালো হবে না।"
দিমিত্রি পাভেলের কথা শোনেনি। সে একাই পরিকল্পনা করল।
সে বাজার থেকে আংটি কিনে রাজপ্রাসাদের গার্ডের কাছে গেল। কিন্তু গার্ড আংটি দেখে বুঝে ফেলল এটা নকল, এবং দিমিত্রিকে মিথ্যা বলার অভিযোগে জেলে পাঠাল।
কয়েকদিন পর সত্যিই হারানো আংটিটি পাভেলের হাতে এসে পড়ল—
সে রাস্তার ধারে একটি শিশুকে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করল, "কেন কাঁদছ?"
শিশুটি বলল, সে মাটিতে খেলছিল এবং কিছু একটা খুঁজে পেয়েছে, যা তার মায়ের কাছে রাখতে চায় না। পাভেল দেখল সেটি আসল সোনার আংটি।
পাভেল সরাসরি রাজপ্রাসাদে গিয়ে আংটিটি জমা দিল।
রাজা খুশি হয়ে তাকে সোনা, টাকা এবং জমি উপহার দিলেন।
দিমিত্রি জেল থেকে মুক্তি পেয়েও খালি হাতে রইল। সে পাভেলকে দেখে শুধু একটাই কথা বলল—
"তুই ঠিকই বলেছিলি—সত্যিই সত্যির শক্তি সব মিথ্যার চেয়ে বড়।"
গল্প: বৃষ্টি হচ্ছে কিনা?
মূল লেখক: আন্তন চেখভ (Anton Chekhov)
অনুবাদ ও উপস্থাপন: মোঃ জয়নাল আবেদীন
রাশিয়ার এক গ্রামের পুরনো বাড়িতে বসবাস করত এক বৃদ্ধা—ভ্যাসিলিসা। বয়স তার আশি ছুঁইছুঁই। অনেক বছর ধরে সে অপেক্ষা করে চলেছে তার ছেলের জন্য, যে শহরে চাকরি করতে গিয়ে আর কখনো ফিরে আসেনি।
গ্রামের মানুষ প্রায়ই এসে জিজ্ঞেস করে,
“তোমার ছেলে কি ফিরে আসবে?”
সে সবসময় হাসিমুখে বলে,
“হ্যাঁ, আজ না হয় কাল, নিশ্চয়ই আসবে।”
একদিন সন্ধ্যায় আকাশ মেঘলা হয়ে এলো। বজ্রের গর্জন, বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দে মনে হচ্ছিল, ঝড় হবে।
ভ্যাসিলিসা বারান্দায় বসে ছিল একটি পুরনো চাদর গায়ে জড়িয়ে।
সে বারবার প্রশ্ন করছিল নিজেকে—
“বৃষ্টি হবে কিনা?”
কিন্তু তার এই প্রশ্নটা যেন আকাশে মিশে থাকা এক গভীর অপেক্ষার প্রতিচ্ছবি।
কিছুক্ষণ পর পাশের বাড়ির এক ছেলেমেয়ে এসে বলল,
“ঠাকুমা, চলো ঘরে ঢুকে পড়ি, বাইরে তো বৃষ্টি শুরু হতে যাচ্ছে।”
ভ্যাসিলিসা ধীরে বলল,
“না, আমি অপেক্ষা করছি... সে বলেছিল বৃষ্টির মধ্যে সে ফিরবে না, তাই এখনই আসতে পারে।”
ঘণ্টাখানেক পর বৃষ্টি নামে। বজ্রপাতের মাঝে বাতাসে একটানা শব্দ—তবুও সে অপেক্ষা করল।
রাত গভীর হলো। ভ্যাসিলিসা ঘুমিয়ে পড়ল বারান্দার চেয়ারে বসেই।
সকালে দেখা গেল, তার ঠোঁটে এক হালকা হাসি।
কেউ জানে না, সে স্বপ্নে কি দেখেছিল।
সে কি তার ছেলেকে দেখেছিল?
সে কি শেষমেশ বিশ্বাস করেছিল, সে ফিরবে?
গল্পের প্রতীকার্থ:
“বৃষ্টি হচ্ছে কিনা?” — এই প্রশ্নটি ছিল এক নিঃসঙ্গ বৃদ্ধার জীবনের শেষ আশা, বিশ্বাস আর প্রহরের প্রতীক।
এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মানুষ কেবল বেঁচে থাকে না, সে প্রতীক্ষা করে, বিশ্বাস করে। এবং অনেক সময়, সেই প্রতীক্ষাই হয় জীবনের শেষ সৌন্দর্য।
গল্প: শেষ চিঠি
মূল ভাষা: রাশিয়ান
লেখক: আন্তন পাভলোভিচ চেখভ
অনুবাদ ও রূপান্তর: মোঃ জয়নাল আবেদীন
সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে, এক পরিত্যক্ত ডাকঘরে কাজ করত ইভান পেত্রোভিচ। বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই। চুল ধূসর, চোখদুটি কুয়াশার মতো।
গত ৪০ বছর ধরে সে মানুষের চিঠি পড়া, গুছিয়ে রাখা, পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত।
কিন্তু এই আধুনিক সময়ে, চিঠি আর কেউ লেখে না। সবাই ফোন করে, মেসেজ পাঠায়। ইভান এখন অলস বসে থাকে। কেউ আর তার দরকার করে না।
এক সন্ধ্যায় ইভান দেখতে পায় পুরোনো ট্রাঙ্কের নিচে চাপা পড়া এক অপ্রেরিত চিঠি। তারিখ— ১৯৮৩ সাল।
চিঠির খামে লেখা:
"তোমার কাছে শেষবার লিখছি..."
প্রাপক: এলেনা ইভানোভা
চিঠিটা হাতে নিয়েই কাঁপতে থাকে ইভান। এ তো তার নিজের লেখা!
ইভান ফিরে যায় ৪০ বছর আগে। সে ও এলেনা একে অপরকে ভালোবাসত, কিন্তু সে সাহস করে বলতে পারেনি। চিঠিতে সে লিখেছিল সব— ভালোবাসা, ভাঙা স্বপ্ন, অপেক্ষার যন্ত্রণা। কিন্তু সাহস করে কখনো পাঠায়নি।
চিঠিটা হারিয়ে গিয়েছিল তারই ডাকঘরে।
“তোমার চুলে প্রথম তুষার পড়ার আগেই যদি আমার ভালোবাসা পৌঁছায়, তবে আমি জানব— আমি দেরি করিনি।”
পরদিন ইভান বেরিয়ে পড়ে এলেনার খোঁজে। শহরের সব রেকর্ড ঘেঁটে, পুরোনো পরিচিতদের খোঁজে সে জানতে পারে—
এলেনা এখন এক বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। নিঃসন্তান, নিঃসঙ্গ, একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন একসময়।
ইভান কাঁপা হাতে চিঠিটা নিয়ে উপস্থিত হয় বৃদ্ধাশ্রমে। এলেনা তাকে চিনে ফেলেন। চোখে জল জমে দুজনের।
“তুমি যদি একদিন আগে পাঠাতে...”
ইভান হাসে, “তাহলে হয়তো আমরা একসঙ্গে হাঁটতাম। এখন... অন্তত একসঙ্গে বসে থাকতে পারি।”
পরবর্তী কয়েক মাস তারা প্রতিদিন একসঙ্গে বসে চা খায়, পুরোনো কবিতা পড়ে, চুপচাপ জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ইভান বলে,
“আমরা সময় হারিয়েছি ঠিকই, কিন্তু অনুভব তো কখনো দেরি করে না।”
উপসংহার
এই গল্প আমাদের শেখায় —
“সবকিছু বদলায়, কিন্তু ভালোবাসার অপেক্ষা কখনো পুরোনো হয় না।”
গল্প : মা
মূল রাশিয়ান
লেখক: ম্যাক্সিম গোর্কি (Maxim Gorky)
প্রকাশকাল: 1906
অনুবাদ ও পুনর্গঠন: মোঃ জয়নাল আবেদীন
ম্যাক্সিম গোর্কি রাশিয়ার একজন বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক, যিনি সাধারণ মানুষের সংগ্রাম ও সাহসিকতাকে তার সাহিত্যে তুলে ধরেছেন। ‘মা’ গল্পটি তার বিখ্যাত রাজনৈতিক উপন্যাস। এটি একটি সাধারণ মায়ের অসাধারণ সাহস ও আত্মত্যাগের কাহিনি। গল্পটি এখানে অনুবাদ করে সাহিত্যিক রূপে উপস্থাপন করা হলো।
১. ছোট্ট ঘরের বিপ্লব
রাশিয়ার এক ছোট্ট শিল্পাঞ্চলে থাকত পেলাগেয়া নামের এক গরিব মা। তার ছেলে, পাভেল, ছিল একটি কারখানার শ্রমিক। পাভেল ধীরে ধীরে বিপ্লবী রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।
পেলাগেয়া প্রথমে ছেলের এসব কর্মকাণ্ড বুঝতে পারত না। সে শুধু চাইত তার ছেলে নিরাপদে থাকুক, খেয়ে-পরে বাঁচুক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে বুঝতে শুরু করে— তার ছেলে কেবল নিজের জন্য নয়, সবার জন্য লড়াই করছে।
২. ভয় আর সাহসের সন্ধিক্ষণে
একদিন পাভেলসহ কয়েকজন যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পেলাগেয়া ভয়ে কেঁপে উঠে, কিন্তু থেমে থাকে না। সে সিদ্ধান্ত নেয়— সে ছেলের পথেই হাঁটবে।
সে মানুষের কাছে যায়, লিফলেট বিলি করে, সভায় বক্তৃতা দেয়। এক সময় সে নিজেই হয়ে ওঠে শ্রমিকদের জন্য অনুপ্রেরণা। এক অসহায়, নিরক্ষর নারী কীভাবে মানুষের মধ্যে সাহস ছড়িয়ে দেয়— এ এক অবিশ্বাস্য রূপান্তর।
৩. মা যখন জাতির প্রতীক
পেলাগেয়ার জীবন ছিল নিঃস্ব, কিন্তু তার মন ছিল সাহসী। তার ‘মাতৃত্ব’ ছিল কেবল রক্তের সম্পর্ক নয়— পুরো জাতিকে আগলে রাখার প্রতীক।
পেলাগেয়া বলে—
“আমার ছেলে একা নয়, হাজারো ছেলে তার মতো। আমি এখন কেবল এক মায়ের কথা বলছি না— আমি সব মায়ের হয়ে কথা বলছি। আমরা ভয় পাব না।”
৪. শেষ যাত্রা
শেষপর্যন্ত পেলাগেয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে সে বলে—
“আমি অপরাধ করেছি, কারণ আমি ভালোবাসতে শিখেছি— সব মানুষকে।”
তার মুখে কোনো ভয় নেই, বরং গর্ব। পেলাগেয়ার আত্মত্যাগ পাভেলের বিপ্লবকে আরও তীব্র করে তোলে। গোটা শহর জেনে যায় এক মায়ের সাহসিকতার কথা।
উপসংহার
গোর্কির ‘মা’ শুধু একটি চরিত্র নয়— এটি একটি প্রতীক। একটি সামাজিক বিপ্লবের মূল অনুপ্রেরণা। এই গল্পে আমরা দেখি— একজন সাধারণ নারী কীভাবে অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে।
গল্প: একটা টাকা
মূল রচয়িতা: আন্তন চেখভ (Anton Chekhov)
প্রকাশকাল: ১৮৮০-এর দশক
অনুবাদ ও পুনর্গঠন: মোঃ জয়নাল আবেদীন
মাস্টার ইয়েগর পেত্রোভিচ একজন মধ্যবয়সী শিক্ষক। শহরের এক স্কুলে প্রাইমারি ক্লাসে পড়ান। তেমন বেশি বেতন না পেলেও নিজের সততা, পরিশ্রম ও ভালোবাসা দিয়ে ছাত্রদের পড়ান। জীবন খুব সাদাসিধে—এক কামরার ঘরে থাকেন, পুরনো চেয়ার-টেবিল, তাতে ধুলা জমে থাকে। কিন্তু তবুও তার মুখে সব সময় এক প্রশান্ত হাসি।
একদিন ক্লাস শেষে এক ছাত্র এসে চুপচাপ তার টেবিলে একটি রুপার এক টাকা রাখল।
ইয়েগর পেত্রোভিচ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
— "তুমি এটা কোথা থেকে পেলে?"
ছাত্রটি বলল,
— "আমার মা বলেছে আপনাকে দিতে। কারণ আপনি আমাকে স্কুলে বিনামূল্যে পড়াচ্ছেন।"
মাস্টার হতবাক হয়ে গেলেন। তার চোখে পানি চলে এলো। তিনি বললেন,
— "না, আমি কোনো টাকা নিই না। আমি ভালোবাসা দিয়ে পড়াই। এটা ফেরত নিয়ে যাও।"
কিন্তু ছাত্রটি বলল,
— "আমার মা বলেছে, আপনি যদি নেন, তাহলে আমরা মনে করবো আপনি আমাদের প্রতি সম্মান রেখেছেন।"
মাস্টার ইয়েগর টাকা হাতে নিলেন। তার মনে এমন একটা আনন্দ বয়ে গেল—যেন এই এক টাকা তার জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
তখন তিনি ভাবলেন—“বহু বছর পড়ালেখা করিয়েছি, অনেক ছাত্র ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে, কিন্তু এই ছোট্ট ছেলেটার মা আমাকে যে এক টাকাটা দিলেন, তাতে যে সম্মান আছে, সেটা কোনো ডিগ্রি দিতে পারে না।”
তিনি সেই টাকাটি একটি ছোট বাক্সে রেখে দিলেন, যেখানে তার সবচেয়ে প্রিয় চিঠি, পুরনো ছবিগুলো রাখা ছিল। কারণ সেটি শুধু এক টাকা নয়, সেটি ছিল তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্মান।
গল্পের শিক্ষণীয় দিক:
• একজন শিক্ষকের প্রকৃত মূল্য টাকা নয়, তার প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান।
• ছোট্ট কিছু দিয়েও কারো হৃদয়ে বড় জায়গা করে নেওয়া যায়।
• ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও মানবতা—এই তিনটি মানুষের জীবনের আসল সম্পদ।
গল্প: যেই রাজকন্যা হাসত না কখনো
লেখক : আলেকজান্ডার আফানাস্যেভ (Alexander Afanasyev)
অনুবাদ ও পুনর্গঠন: মোঃ জয়নাল আবেদীন
এক ছিল একটি রাজ্য, যেখানে এক রাজকন্যা—কখনও হাসত না। তাকে হাসানোর প্রতিশ্রুতিতে রাজা ঘোষণা করলেন: “যে কাউকে যদি রাজকন্যা হাসাতে পারে, তাকে আমার রাজকন্যার সাথে বিয়ে করা হবে।”
অনেক প্রয়াস করেও কেউ সফল হতে পারল না।
এদিকে, রাজ্যের একজন নিম্ন শ্রমিক কাজ থেকে প্রতি বছর একটি কয়েন নিতে পারত। তিন বছর ধরে সে প্রতি বছর একটি একটি করে কয়েন নিতে লাগলো। যা পরবর্তীতে তিনটি কয়েন এর দুটি ডোবায় পড়ে হারিয়ে যায়।
তৃতীয় বছরে, ডোবায় যাওয়ার পথে সে, সেই হারানো দুইটি কয়েন ফিরে পায়।
এখন সে হাতে কয়েন পেল।কিন্তু সে ভাবলো এই দুটো কয়েন ছাড়া আমার জীবন চলছে। তাই —সে এই কয়েনগুলো দান করার সিদ্ধান্ত নিলো। সে কয়েনগুলোর এক এক করে দিয়ে দিল। একটি কয়েন ইঁদুরকে, একটি কয়েন ঘাসফড়িংকে , আর একটি কয়েন মাছকে একেবারে দিয়ে দিল।
এরকিছুদিন পর সে রাজপ্রাসাদের পাশে দিয়ে যাচ্ছিল; হঠাৎ মাটি থেকে পিছলে পড়ে কাদায় পড়ে গেল। তখন সেই ইঁদুর , ঘাসফড়িং ও মাছ —সাহায্য করতে এগিয়ে এল। তারা প্রতিদান হিসেবে তাকে কাদা থেকে উঠাতে সাহায্য করলো। এই দৃশ্য রাজকন্যার নজরে পড়ল, আর হঠাৎই তার মুখে একটা হাসি ফুটে উঠলো।রাজার কাছে সংবাদ গেল, রাজকন্যা হাসতেছে এই দৃশ্য দেখে। সাথে সাথে রাজা হুকুম দিলেন একে সসম্মানে রাজদরবারে নিয়ে আসতে।
এদিকে, শ্রমিকটি কাদায় পড়ার কারণে তার চেহারা অনেক সুন্দর হয়ে গেল। রাজপ্রাসাদে তাকে গোলাপ জল দিয়ে গোসল করে সুন্দর পোশাক পরিয়ে রাজার কাছে নিয়ে গেল।রাজা শ্রমিকটিকে দেখে অভিভূত হয়ে গেলেন।তিনি হুকুম দিলেন তাকে লেখা পড়া শিখিয়ে রাজকন্যার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে। তিনি শ্রমিকটিকে রাজকন্যার সাথে বিয়ে দিবেন।
রাজকপ্রাসাদে ভালো খাবার আর শিক্ষা পেয়ে শ্রমিকটি হয়ে গেল handsome (সুন্দর) মানুষ। তারপর ভালো একটি দিন দেখে রাজা রাজকন্যাকে তাহার সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন।শ্রমিকটি রাজদরবারের শিক্ষা পেয়ে, রাজকন্যাকে সবসময় হাসিখুশি রাখতে পেরেছিল। এরপর থেকে তারা সুখেই বাস করতে থাকল।
শিক্ষণীয় বার্তা
• সহানুভূতি ও উদারতা: অন্যকে বিনা প্রত্যাশায় সাহায্য করলে সেই দান ফিরে আসে।
• সাধারণ মানুষের সৌন্দর্য ও সদাচরণ: সত্যিকারের শিক্ষা পেলে —ভালো হৃদয় মনের দরজা খুলে দেয়।
গল্প: লোহার দোকানের শিক্ষার্থী
লেখক: ম্যাক্সিম গোরকি (Maxim Gorky)
অনুবাদ ও পুনর্গঠন: মোঃ জয়নাল আবেদীন
রাশিয়ার এক ছোট শহরে থাকত পেত্র নামের এক দরিদ্র কিশোর। বাবা-মা দুজনেই মৃত্যুবরণ করায় কিশোর বয়সেই কাজ খুঁজতে বের হয়।সে কাজ খুঁজে, কিন্তু পায় না। অবশেষে একদিন একটি লোহার দোকানে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ পেল।শর্ত ছিল আগামী ছয় মাসে যদি সে ভালো কাজ শিখতে না পারে, তবে তাকে কাজ থেকে বাদ দেয়া হবে।
প্রথম দিন থেকেই তার কাজ ছিল ভারী হাতুড়ি দিয়ে লোহা পেটানো। এই কাজ অনেক কটিন ছিল। ধোঁয়া আর আগুনের মধ্যে দিন কাটানো।
মালিক ছিলেন কঠোর, কিন্তু ন্যায়পরায়ণ। তিনি পেত্রকে বললেন—
“শুধু হাতের শক্তি নয়, চোখ আর মনেরও শাণ দিতে হবে।”
পেত্র লক্ষ্য করল, মালিক যখন লোহা গড়েন, তিনি কখনও তাড়াহুড়ো করেন না। সঠিক সময়ে সঠিক আঘাত—এই ছিল তাঁর সাফল্যের রহস্য।
মাসের পর মাস পেত্র শিখতে লাগল। প্রথম দিকে তার আঘাত বেখাপ্পা হতো, কিন্তু ধীরে ধীরে সে নিখুঁত সময়ে হাতুড়ি চালাতে শিখল।
একদিন মালিক অসুস্থ হয়ে পড়লেন, দোকানের বড় অর্ডার হাতে এল। পেত্র একাই কাজটি সম্পন্ন করল, এবং গ্রাহক এতটাই সন্তুষ্ট হল যে দোকানের খ্যাতি আরও ছড়িয়ে পড়ল।
মালিক পেত্রকে ডেকে বললেন—
“তুমি শুধু হাতুড়ি চালানো নয়, ধৈর্য, মনোযোগ আর সময়ের মূল্য শিখেছ। এই শিক্ষাই তোমাকে সারা জীবনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
এই দোকানে সে দশবছর চাকরি করলো। এখান থেকে পাওয়া শিক্ষা এবং জমানো অর্থ দিয়ে পেত্র নিজেই লোহার দোকান খুলে সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠল।
শিক্ষণীয় বার্তা
• ধৈর্য ও মনোযোগ: কাজের সঠিক সময় এবং ধৈর্য সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
• শেখার মানসিকতা: কঠিন পরিশ্রম ও মনোযোগ দিয়ে যেকোনো দক্ষতা অর্জন সম্ভব।
• সময়ের মূল্য: সময়মতো সঠিক পদক্ষেপই বড় সাফল্য এনে দেয়।
গল্প: ধৈর্যশীল কৃষক
লেখক: লিও টলস্টয় (Leo Tolstoy)
অনুবাদ ও পুনর্গঠন: মোঃ জয়নাল আবেদীন
রাশিয়ার এক গ্রামে থাকতেন ইভান নামের এক কৃষক। তিনি খুব পরিশ্রমী, সৎ এবং শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন। নিজের ছোট্ট জমিতে চাষ করে, গরু-ছাগল পুষে সংসার চালাতেন। কিন্তু প্রতিবেশীরা প্রায়ই অভিযোগ করত—“ইভান বোকা, কারণ অন্যেরা সুযোগ পেলে লাভ নেয়, কিন্তু ইভান কখনো কাউকে ঠকায় না।” তিনি একটু চালাকি করলে আরো ভালো থাকতে পারতেন।
এক বছর গ্রামে প্রচণ্ড খরা হলো। ফসল নষ্ট, গবাদি পশু রোগাক্রান্ত হলো। অনেকেই ঋণ করে সংসার চালাতে লাগল। সেই সময় পাশের জমির মালিক পেত্র, ইভানের কাছে এসে বলল—
“তোমার কুয়ায় পানি আছে, কিন্তু আমার জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। আমাকে পানি দাও।”
ইভানের স্ত্রীর আপত্তি ছিল—“আমাদেরও পানি সীমিত, দিলে হয়তো নিজেদের ফসলই বাঁচবে না।” কিন্তু ইভান বলল—
“মানুষের প্রয়োজন মেটানোই প্রথম কর্তব্য।”
সে পেত্রকে পানি দিল, এমনকি নিজের ফসলের জন্য সামান্য রেখে বাকিটাও ভাগ করে দিল। এতে তার ফসলের জমিতে পানির পরিমাণ তুলনামূলক কম পড়লো।
খরা শেষে বর্ষা এলো। পেত্রের জমি প্রচুর ফসল দিল, আর ইভানের জমি মাঝারি মানের ফলন দিল। গ্রামবাসী বলল—“দেখলে তো, অন্যকে দিয়ে নিজের ক্ষতি করলে। শেষমেষ তোমারই লোকসান হলো।”
কিন্তু কিছুদিন পর শহর থেকে একজন বড় ব্যবসায়ী এলেন, তিনি সারা গ্রাম থেকে শস্য কিনতে চাইলেন। পেত্রের জমির ফসল ছিল উৎকৃষ্ট মানের,সে সহজে তা উচ্চ দামে বিক্রি করতে পারলো। আর পেত্র কৃতজ্ঞতায় ইভানের শস্যও একসাথে উচ্চ দামে বিক্রি করে দিল। কারণ পেত্র মনে করলো, ইভান পানি দান করায়ই সে এত ভালো ফসল উৎপাদন করতে পেরেছিল। সে ব্যবসায়ীকে শর্ত দিয়েছিল আমার ফসলের সাথে সাথে ইভানের ফসলও কিনতে হবে,তবেই আমি তোমার কাছে ফসল বিক্রি করবো।
এতে ইভানের আয় গ্রামে সবার চেয়ে বেশি হলো।
গ্রামের বৃদ্ধ জ্ঞানী লোকটি বললেন—
“যে অন্যকে সাহায্য করে, ঈশ্বর তার জন্য অপ্রত্যাশিত পথ খুলে দেন।”
ইভান বুঝলেন, সৎকর্ম কখনো বৃথা যায় না, যদিও তার ফল তাৎক্ষণিক না-ও হতে পারে।
শিক্ষণীয় বার্তা
• নিঃস্বার্থ সাহায্য: প্রয়োজনে অন্যকে সাহায্য করলে শেষ পর্যন্ত তার প্রতিদান পাওয়া যায়।
• ধৈর্য: সৎকর্মের ফল সময় নিয়ে আসে, তাড়াহুড়ো করলে দেখা যায় না।
• সম্প্রীতি: একে অপরের পাশে দাঁড়ালে পুরো সমাজ উপকৃত হয়।
গল্প: মানুষের প্রকৃত সম্পদ
লেখক: লিও টলস্টয় (Leo Tolstoy)
অনুবাদ ও পুনর্গঠন: মোঃ জয়নাল আবেদীন
এক গ্রামে থাকতেন অ্যান্ড্রেই নামের একজন মধ্যবয়সী মানুষ। তিনি ধনবান না হলেও, পরিশ্রমী এবং সৎ মানুষ ছিলেন। তার জীবন সাধারণ হলেও, সে সবসময় অন্যের জন্য চিন্তা করত,তাদের জন্য কাজ করতো।
একদিন গ্রামের বাজারে একজন বড় ব্যবসায়ী এলেন। তিনি ঘোষণা করলেন যে, গ্রামের সবচেয়ে পরিশ্রমী এবং সৎ কৃষককে নগদ পুরস্কার দিবেন । সমস্ত গ্রামজনে এই খবর শুনে উচ্ছ্বসিত হল।
অনেকেই নিজের স্বার্থে চেষ্টা করল,পরিশ্রম করলো। কিন্তু তারা সবাই প্রতিযোগিতায় প্রতারণা করল, একে অপরকে ঠকানোর চেষ্টা করল।
অ্যান্ড্রেই কোনো প্রতারণা করল না। সে তার ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী কাজ করল, সত্যনিষ্ঠা এবং কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে গেল। প্রতিদিন সকালে উঠেই মাঠে কাজ করত, গরু-ছাগলকে যত্ন করত, গ্রামের পথ ঘাট ঠিক রাখতে সাহায্য করত।
পরদিন বিচারকরা এলেন।তারা গ্রামে পুরো দিন থেকে সব কৃষককের কাজ দেখলেন। বিচারকরা সবাই অবাক হল, কারণ তারা দেখল অ্যান্ড্রেই সবচেয়ে পরিশ্রমী এবং দায়িত্বশীল।
শেষে তিনি নির্বাচিত হলেন।
পুরস্কার পাওয়ার সময় অ্যান্ড্রেই বললেন—
“আমি ধনী হতে চাইনি, আমি শুধু চেষ্টা করেছি মানুষের কাজে সাহায্য করতে। মনে করি, মানুষের প্রকৃত সম্পদ হচ্ছে সততা, পরিশ্রম এবং অন্যের কল্যাণে সাহায্য করার মানসিকতা।”
গ্রামের সবাই তার কথা শুনে ভাবল। তারা বুঝল, যে ধন-সম্পদ মানুষ অর্জন করে, তা স্থায়ী না; কিন্তু মানুষের মধ্যে সততা, পরিশ্রম এবং উদারতা থাকলে সেটি তার প্রকৃত ধন।
পরে অ্যান্ড্রেই পুরস্কারটি পেয়ে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দান করে দিলেন । শিক্ষার্থীরা তার উদারতা দেখে অনুপ্রাণিত হল। অ্যান্ড্রেই জানত—মানুষের প্রকৃত ধন হলো অন্যকে সাহায্য করার মানসিকতা।
শিক্ষণীয় বার্তা
• সৎকর্ম ও পরিশ্রম: স্থায়ী সম্পদ ধন নয়, সততা ও কঠোর পরিশ্রম।
• উদারতা ও সাহায্য: অন্যের কল্যাণে সাহায্য করা জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান শিক্ষা।
• মানবিক গুণাবলি: প্রকৃত সম্পদ হলো মানুষের মধ্যে থাকা ভালো চরিত্র।