ঘুরে এলাম উত্তরা গণভবন, নাটোর

25 Jul 2025 05:19:31 AM

ভ্রমণ শিরোনাম: ঘুরে এলাম উত্তরা গণভবন, নাটোর

লেখকঃ মোঃ জয়নাল আবেদীন 
তারিখ: ২১ এপ্রিল ২০২৫

 


কখনো কখনো অফিসের দায়িত্বের মধ্যেই মেলে জীবনের ছোট ছোট আনন্দ।
এবার ঠিক এমনটাই হলো।

গত ২১ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে রাজশাহীতে তিন দিনের একটি সরকারি প্রশিক্ষণে অংশ নিতে রওনা দিলাম রংপুর থেকে। যেহেতু এটি ছিল সরকারি ট্রিপ এবং নাটোর পড়ে রুটের মধ্যে, তাই ভেবে নিলাম — পরিবারকে সঙ্গে নিয়েই যাই এবং পথে একটুখানি আনন্দ সময় কাটিয়ে নিই উত্তরা গণভবন ঘুরে।

যাত্রা শুরু:

সকাল ১০ টা। গাড়িতে উঠলাম আমরা ছয়জন — আমি, আমার স্ত্রী, আমাদের তিন ছেলে আর আমার শ্রদ্ধেয় বাবা। ব্যাগে প্রশিক্ষণের নথি আর ব্যাগের পাশেই সন্তানদের খুশির কোলাহল। মনে হচ্ছিল, অফিস আর পরিবার — দুটো দিকই একসাথে সামলে আজকের দিনটা হয়ে উঠবে বিশেষ কিছু।

 

বেলা ১৫ টার দিকে পৌঁছে গেলাম উত্তরা গণভবনের সামনে। ফটকে দাঁড়িয়ে মনে হলো — সময় যেন থমকে গেছে। বিশাল রাজকীয় ভবন, সবুজ প্রাঙ্গণ, আর চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ইতিহাসের নিঃশব্দতা — আমাদের সকলের মন ছুঁয়ে গেল।

আমার ছেলেরা দৌঁড়ে বেড়াল লনের দিকে, আমি বাবাকে নিয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশ করলাম ভবনের ভেতরে।
ওখানকার কর্মরত স্টাফ জানালেন — একসময় এটি ছিল নাটোর রাজবাড়ির অংশ, পরবর্তীতে এটি রাষ্ট্রপতির উত্তরাঞ্চল অফিস হিসেবে ঘোষণা করেন।

ইতিহাস ও অনুভব:

ভবনের ভেতরে ঢুকে অনুভব করলাম, এটি কেবল একটি পুরনো দালান নয়, এটি ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষ্য।  প্রতিটা জিনিস ইতিহাসের চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আছে সান বাঁধানো পুকুর ঘাট।

আমার বাবা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন হয়তো সেই রাজবাড়ীর রাজকীয় ঘটনা ভেবে। 

পরিবার আর দায়িত্বের মিলন:

যাত্রাটা ছিল রাজশাহীর অফিসিয়াল দায়িত্বে যাওয়ার। তবে মাঝপথে পরিবারের জন্য কিছু সময় বের করে নেওয়াটা যেন এক শান্তির অনুভূতি দিল।
আমার স্ত্রী ভবনের নকশা আর ছবি গ্যালারি ঘুরে দেখলেন মনোযোগ দিয়ে। ছেলেরা ভবনের পেছনের বাগানে খেলতে ব্যস্ত।

রাজশাহীর পথে:

সন্ধ্যার দিকে আবার যাত্রা শুরু করলাম রাজশাহীর পথে। মনটা আনন্দে ভরপুর — কারণ কর্তব্যের পথে থেকেও পরিবারের সঙ্গে কিছু মূল্যবান সময় কাটাতে পারলাম।

 

শেষ কথা:

এই সফর ছিল দায়িত্ব ও সম্পর্কের ভারসাম্যের এক নিখুঁত উদাহরণ। অফিসের কাজ করতে গিয়েও পরিবারের সঙ্গে ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখা, শিশুদের শেখানো, বাবার স্মৃতি জাগানো — সব মিলিয়ে এটি এক হৃদয়স্পর্শী অভিজ্ঞতা।

উত্তরা গণভবনের স্মৃতি আজীবন রয়ে যাবে আমাদের পারিবারিক গল্পে।

 

    গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ

 

অবস্থান: দিনাজপুর-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে, নাটোর জেলা শহরের খুব কাছেই


বর্তমান ব্যবহার: রাষ্ট্রপতির উত্তরবঙ্গ সফরের সময়কার সরকারি আবাস ও দপ্তর


সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য: নির্ধারিত দিনে প্রবেশযোগ্য

 

📚 ইতিহাস ও বিবরণ:

🔹 রাজবাড়ি থেকে গণভবনের যাত্রা:


উত্তরা গণভবন মূলত নাটোরের রাজ পরিবারের রাজবাড়ি ছিল।এটি নির্মিত হয় ১৮৭৩ সালে, নাটোরের বিখ্যাত রানি ভুবনময়ী দেবী কর্তৃক।

স্থাপত্যশৈলী ইউরোপীয় এবং মুগল ঘরানার সমন্বয়ে তৈরি।

 

একসময় এখানে নাটোরের রাজারা থাকতেন এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

 

১৯৭৪ সালে এটিকে সরকারিভাবে উত্তরা গণভবন ঘোষণা করেন।

 

উদ্দেশ্য ছিল, রাষ্ট্রপতি ও সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা উত্তরাঞ্চলে আসলে এখানে অবস্থান ও কাজ করতে পারেন।

 

🔹 আধুনিক ব্যবহার:


বর্তমানে এটি রাষ্ট্রপতির উত্তরবঙ্গ সফরের সময়ের অফিস ও আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ভবনের ভেতরে রাষ্ট্রপতির কনফারেন্স রুম, বিশ্রামাগার, অফিস কক্ষ, বৈঠকখানা রয়েছে।

 

 

🖼️ দর্শনীয় বৈশিষ্ট্য:

 

🏠 স্থাপত্য

ইউরোপীয় ও উপমহাদেশীয় রীতির সমন্বয়ে দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী

 


🌳 চত্বর

সবুজ লন, শতবর্ষী গাছ, পুকুর ও মনোরম পরিবেশ রয়েছে। 

 


🏛️ সভাকক্ষ

রাষ্ট্রপতির আনুষ্ঠানিক সভা ও দাপ্তরিক কাজের জন্য নির্ধারিত

 


👨‍👩‍👧‍👦 দর্শনার্থীদের জন্য

নির্দিষ্ট দিনে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত, প্রাথমিকভাবে অনুমতি প্রয়োজন হতে পারে

 

 

 

 

🔍 গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:


প্রবেশ ফি: নামমাত্র (প্রশাসনের নিয়ম অনুসারে পরিবর্তনশীল)

নিরাপত্তা ব্যবস্থা: অত্যন্ত কড়াকড়ি নিরাপত্তা থাকে।

ছবি তোলার অনুমতি: নির্দিষ্ট স্থানে সীমিতভাবে অনুমোদিত

 

খোলা থাকার সময়: সাধারণত সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা (সরকারি ছুটি ছাড়া)

 

 

 বিশেষ গুরুত্ব:


এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, রাজনীতি ও সংস্কৃতির এক মিলনস্থল।

 

উত্তরা গণভবন উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্মৃতির প্রতীক।