ভাসিলিসা দ্য বিউটিফুল
গল্প:- ভাসিলিসা দ্য বিউটিফুল
লেখক: আলেকজান্ডার আফানাস্যেভ (Alexander Afanasyev)
অনুবাদ ও উপস্থাপন: মোঃ জয়নাল আবেদীন
রাশিয়ার এক গ্রামে বাস করত এক ধনী ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রী। তাদের একমাত্র মেয়ে ভাসিলিসা জন্মের পর থেকেই ছিল অসাধারণ সুন্দরী। সবাই তাকে ডাকত ভাসিলিসা দ্য বিউটিফুল। কিন্তু ভাগ্যের খেলায়, সে যখন মাত্র আট বছর বয়সী, তখন তার মা অসুস্থ হয়ে মারা যান। মৃত্যুর আগে মা তাকে একটি ছোট কাঠের পুতুল দেন। মা বলেছিলেন—
“মা, যখনই কষ্টে পড়বে, এই পুতুলকে খাওয়াবে, কথা বলবে—এটি তোমাকে সাহায্য করবে।”
মায়ের মৃত্যুর পর কিছুদিন শান্তি থাকলেও, এক সময় ভাসিলিসার বাবা আবার বিয়ে করলেন। নতুন সৎমা ও সৎবোনেরা ছিল নিষ্ঠুর ও হিংসুক। তারা ভাসিলিসাকে সারাদিন কষ্টের কাজ করাত, সুন্দর কাপড় পরতে দিত না, ভালো খাবার খেতে দিত না।
একদিন বাবা ব্যবসার কাজে দূরে চলে গেলেন। তখন সৎমা কূটচাল করল—ভাসিলিসাকে এক অন্ধকার বনে পাঠিয়ে দিল আগুন আনতে, কিন্তু সেই আগুন আনতে হবে ভয়ঙ্কর ডাইনী বাবা ইয়াগা-র কাছ থেকে। গ্রামের সবাই জানত, বাবা ইয়াগা মানুষের মাংস খায়!
ভাসিলিসা ভয় পেলেও মায়ের দেওয়া পুতুলকে খাবার খাইয়ে সাহায্য চাইল। পুতুল তাকে সাহস দিল এবং বলল কিভাবে বাবা ইয়াগার বাড়ি খুঁজে পেতে হবে।
বাবা ইয়াগার সঙ্গে দেখা
বনের গভীরে দাঁড়িয়ে ছিল এক ভয়ঙ্কর বাড়ি, মুরগির পায়ের ওপর ঘুরছে—এটাই বাবা ইয়াগার ঘর! বাড়ির চারপাশে ছিল মানুষের খুলির বেড়া, যার চোখে জ্বলছিল আগুন। বাবা ইয়াগা ভাসিলিসাকে দেখে হাসল—
“তুমি আমার কাছে কী চাও, সুন্দরী মেয়ে?”
ভাসিলিসা বলল, “আমার পরিবার আগুন চায়, তাই এসেছি।”
বাবা ইয়াগা শর্ত দিল—আগুন পেতে হলে তাকে তিনটি কঠিন কাজ করতে হবে:
• ঘর পরিষ্কার করা
• প্রচুর খাবার রান্না করা
• অগণিত শস্য বীজ আলাদা করা
ভাসিলিসা মন খারাপ করে পুতুলকে খাওয়াল। পুতুল জাদুর মতো সব কাজ শেষ করে দিল। বাবা ইয়াগা অবাক হল, কিন্তু কিছু বুঝতে না পেরে বলল—
“তুমি বুদ্ধিমতী, সাহসী। নাও, আগুন নিয়ে যাও।”
সে একটি খুলির ভেতরে জ্বলন্ত আগুন দিয়ে দিল।
ভাসিলিসার প্রত্যাবর্তন
ভাসিলিসা আগুন নিয়ে বাড়ি ফিরল। কিন্তু আশ্চর্য! বাড়িতে ঢুকতেই খুলির আগুন জ্বলতে শুরু করল এবং তার সৎমা ও সৎবোনদের পুড়িয়ে ছাই করে দিল। এভাবে ভাসিলিসা নিষ্ঠুরতার হাত থেকে মুক্তি পেল।
পরে সে শহরে চলে গেল, একজন বৃদ্ধার সঙ্গে থাকতে লাগল। নিজের হাতে সুন্দর কাপড় বুনে বিক্রি করত। তার বুদ্ধি ও সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত। একদিন রাজপুত্র তার বোনা কাপড় দেখে মুগ্ধ হলেন, ভাসিলিসার সঙ্গে দেখা করলেন এবং তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। ভাসিলিসা রাজি হল, আর তারা সুখে শান্তিতে থাকতে লাগল।
গল্পের শিক্ষা
• ধৈর্য ও সদাচরণ সব বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করে।
• মায়ের আশীর্বাদ বা বড়দের উপদেশ জীবনের কঠিন মুহূর্তে অমূল্য সহায়ক।
• সাহসী ও বুদ্ধিমান মানুষ শেষ পর্যন্ত সাফল্য ও শান্তি পায়।