অন্ধকার থেকে আলোর পথে: হেলেন কেলারের অনুপ্রেরণামূলক জীবন
অন্ধকার থেকে আলোর পথে: হেলেন কেলারের অনুপ্রেরণামূলক জীবন
-
মোঃ জয়নাল আবেদীন
১৮৮০ সালের ২৭ জুন, যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যের টাসকাম্বিয়া নামের ছোট্ট এক শহরে জন্ম নিলো এক শিশু, নাম হেলেন অ্যাডামস কেলার। প্রথম দেখায় সে ছিলো একদম সাধারণ একটি মেয়ে—চঞ্চল, হাসিখুশি, পরিবারের আদরের ফুল। বাবা আর্থার এইচ. কেলার ছিলেন স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক, আর মা কেট অ্যাডামস কেলার ছিলেন শিক্ষিত, কোমলমতি এক নারী, যার চোখে মেয়ের ভবিষ্যৎ ছিল উজ্জ্বল স্বপ্নে ভরা।
কিন্তু হেলেনের জীবনের সূর্য হঠাৎই ঢেকে গেল ভয়ংকর অন্ধকারে। মাত্র ১৯ মাস বয়সে (১৮৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে) এক রহস্যজনক জ্বরে আক্রান্ত হলো ছোট্ট হেলেন। চিকিৎসকরা বুঝতেই পারলেন না এটি মেনিনজাইটিস না স্কারলেট ফিভার। কয়েকদিনের মধ্যেই জ্বর সেরে গেলেও, পৃথিবীর আলো আর শব্দ—দুটোই হারিয়ে গেল হেলেনের জীবন থেকে। সে হয়ে গেল অন্ধ ও বধির।
এক মুহূর্তেই তার চারপাশের দুনিয়া নিঃশব্দ, নিঃরঙিন হয়ে গেল। শিশুটি বোঝে না, কেন মা-বাবার মুখ নড়ে কিন্তু সে কিছু শুনতে পায় না, কেন আলো জ্বলে কিন্তু সে কিছু দেখতে পারে না। ক্রোধ, ভয় আর একাকীত্ব মিশে গেল তার প্রতিটি আচরণে। সে চিৎকার করতো, জিনিস ছুড়ে মারতো, এমনকি পরিবারের সদস্যদের আঁচড়েও দিত।
তবুও মা কেট কেলার হাল ছাড়েননি। একদিন তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন—“আমার মেয়ে এই অন্ধকারেই হারিয়ে যাবে না; একদিন সে আলো খুঁজে পাবে।”
হেলেন কেলার তখন মাত্র দুই বছর বয়সী। তার পৃথিবী নিঃশব্দ, অন্ধকার—এক এমন জগৎ, যেখানে আলো নেই, শব্দ নেই, ভাষা নেই। ১৮৮২ সালের সেই অসুখ তার থেকে কেড়ে নিয়েছিল চোখের দৃষ্টি আর কানের শ্রবণ, কিন্তু কেড়ে নিতে পারেনি তার অন্তরের অদম্য কৌতূহল।
ছোট্ট হেলেন বোঝে না, কেন মা’য়ের মুখ নড়ে অথচ সে কিছু শুনতে পায় না। কেন সূর্য ওঠে, অথচ সে আলো দেখতে পারে না। প্রতিদিনের প্রতিটি মুহূর্ত তার কাছে এক বিভ্রান্তিকর যুদ্ধ। সে হাতড়ে বেড়ায় পৃথিবীকে—মায়ের মুখ, গাছের পাতা, টেবিলের কাঠ, পানি, আগুন—সবকিছুকে স্পর্শ করে বোঝার চেষ্টা করে কী ঘটছে চারপাশে।
কিন্তু কথা বলতে না পারা, বোঝাতে না পারার যন্ত্রণা তাকে করে তুলেছিল বিক্ষিপ্ত, রাগী, অস্থির। সে যখন কিছু চাইতো, আর কেউ বুঝতে না পারতো—সে রাগে গর্জে উঠতো, জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলতো। এমনকি তার বাবা-মাও ভয় পেত কখন ছোট্ট হেলেনের ক্রোধ জেগে উঠবে।
বয়স বাড়তে লাগল, কিন্তু বোঝাপড়ার সেই সীমিত ভাষা তাকে আরো নিঃসঙ্গ করে তুললো। পরিবার ভালোবাসত, কিন্তু অসহায় ছিল। কীভাবে তারা শেখাবে এমন এক শিশুকে, যে না শুনতে পায়, না দেখতে পায়?
মা কেট কেলার হাল ছাড়লেন না। তিনি প্রতিদিন মেয়ের আচরণ লক্ষ্য করতেন। বুঝতে পারতেন, এই ছোট্ট মেয়েটি বুদ্ধিমতী—তার মধ্যে এক আলাদা আলো আছে, শুধু সেটি জ্বালানোর জন্য দরকার এক সঠিক শিক্ষক।
১৮৮৬ সালের এক শীতল সন্ধ্যায় কেট কেলার এক প্রতিবেদন পড়লেন—চার্লস ডিকেন্সের লেখা এক অন্ধ ও বধির মেয়ে “লরা ব্রিজম্যান”-এর গল্প।
মায়ের হৃদয়ে তখনই এক আশার প্রদীপ জ্বলে উঠল—“যদি লরা শিখতে পারে, তাহলে আমার হেলেনও পারবে।”
তিনি তাঁর স্বামী আর্থার কেলারকে নিয়ে চিঠি লিখলেন পারকিন্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য ব্লাইন্ড-এ, বোস্টনে। সেখান থেকেই একদিন তারা পেলেন সেই আশার আলো— এক তরুণী শিক্ষক, যিনি আসবেন অন্ধকার ভেদ করে হেলেনের জীবনে আলো আনতে।
সময়টা ছিল ১৮৮৭ সালের মার্চ মাস।
এই মাসেই শুরু হলো ইতিহাসের এক অলৌকিক অধ্যায়—অ্যানি সুলিভান নামের এক শিক্ষিকার আগমন, যিনি বদলে দিলেন হেলেন কেলারের ভাগ্য।
১৮৮৭ সালের ৩ মার্চ—আলাবামার টাসকাম্বিয়া শহরের বাতাসে যেন এক নতুন সূর্যের আলো ফুটে উঠেছিল। সেই দিনই মাত্র ২০ বছর বয়সী এক তরুণী শিক্ষক, অ্যানি ম্যানসফিল্ড সুলিভান, হেলেন কেলারের বাড়ির দরজায় পা রাখলেন। তার পরনে ছিল সাধারণ পোশাক, কিন্তু চোখে ছিল অটল বিশ্বাস—তিনি এই অন্ধকারে আলো ছড়াতে এসেছেন।
অ্যানি নিজেও ছোটবেলায় দুর্ভাগ্যের শিকার ছিলেন—অল্প বয়সে চোখে সংক্রমণ, দীর্ঘ সময় অন্ধত্ব, অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া, তারপর নিজের চোখের চিকিৎসা করে কিছুটা দৃষ্টি ফিরে পাওয়া।
তাই হয়তো হেলেনের ভেতরের যন্ত্রণাটা তিনি অন্য সবার চেয়ে বেশি বুঝতে পেরেছিলেন।
প্রথম দিনেই হেলেন তাকে পরীক্ষা নিতে শুরু করল।
সে ছুড়ে ফেলল খেলনা, দরজা বন্ধ করে দিল, এমনকি অ্যানির মুখে হাত ছুঁয়ে তার অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করল। অ্যানি বুঝলেন—এই মেয়েটিকে জেতানো যাবে না ভয় দেখিয়ে, জেতাতে হবে ভালোবাসা আর ধৈর্যের মাধ্যমে।
প্রথম পাঠ শুরু হলো—“স্পর্শের মাধ্যমে শব্দ শেখানো।” অ্যানি হেলেনের হাতে একটি পুতুল দিলেন। তারপর হাতের তালুতে আঙুল দিয়ে লিখলেন—D-O-L-L। হেলেন কিছুই বুঝল না, তবে অক্ষরগুলোর স্পর্শে কৌতূহল জন্মালো। সে পুতুলটা ধরল, আবার আঙুল দিয়ে লেখাটা নকল করতে লাগল।
অ্যানির চোখে তখন এক মৃদু আশার আলো জ্বলে উঠেছে—“হয়তো এই মেয়ে একদিন পৃথিবীকে বুঝবে।” কিন্তু হেলেন তখনও “অক্ষর” আর “বস্তু”-র সম্পর্ক বোঝে না। দিন যায়, রাত যায়—অ্যানি প্রতিদিন হাতের উপর অক্ষর আঁকেন, আবার হেলেন ভুলে যায়। তবুও শিক্ষক হার মানেন না।
তারপর এল সেই অলৌকিক দিন — ১৮৮৭ সালের ৫ এপ্রিল। অ্যানি হেলেনকে নিয়ে গেলেন বাড়ির পাশের জলের পাম্পের কাছে।তিনি হেলেনের এক হাতে ঠান্ডা পানি ঢাললেন, আর অন্য হাতে লিখলেন—W-A-T-E-R। হঠাৎ যেন হেলেনের ভেতরে বজ্রপাতের মতো কিছু ঘটল।তার মুখে বিস্ময়ের হাসি, শরীর কেঁপে উঠল, চোখের কোণ ভিজে উঠল।সে বুঝে ফেলেছে—এই ঠান্ডা তরল জিনিসটার নাম “পানি”! সে বারবার হাতের তালুতে লিখতে লাগল “water… water…!”
অ্যানির চোখে তখন অশ্রু—খুশির, আশ্চর্যের, বিশ্বাসের। আর হেলেনের জীবনের অন্ধকারে প্রথমবারের মতো ফুটে উঠল “বোঝার আলো।”
সেই মুহূর্ত থেকেই হেলেন যেন নতুন জন্ম নিল।
সে পাগলের মতো চারপাশের জিনিস ছুঁয়ে জানতে লাগল—এর নাম কী? অ্যানি লিখতে লাগলেন—“মাটি”, “পাতা”, “গাছ”, “ঘর”…প্রতিটি শব্দ যেন এক নতুন দরজা খুলে দিচ্ছিল তার সামনে।
১৮৮৭ সালের এপ্রিলের সেই দিনটি ছিল হেলেন কেলারের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মুহূর্ত।
“Water” শব্দ শেখার পর যেন তার চোখ খুলে গেল অদেখা এক জগতে। অ্যানি সুলিভান ছিলেন তার হাত ধরে থাকা দিশারী — শিক্ষক, বন্ধু, মা, সবকিছু। পরবর্তী মাসগুলোতে হেলেন যেন স্পঞ্জের মতো জ্ঞান শুষে নিতে লাগল।
সে দিনরাত হাতের অক্ষরে শেখে নতুন নতুন শব্দ, ঘরের জিনিসের নাম, মানুষের মুখ, এমনকি “ভালোবাসা” শব্দেরও অর্থ।একবার অ্যানি তার হাতে লিখলেন “love” — হেলেন ভাবল, ভালোবাসা কি দেখা যায়? অ্যানি মৃদু হেসে তার বুকে হাত রেখে বললেন, “ভালোবাসা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায়।”হেলেন তখন বুঝল—সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো চোখে দেখা যায় না, হৃদয়ে অনুভব করা যায়।
১৮৮৮ সালে, মাত্র ৮ বছর বয়সে, অ্যানি সুলিভানের সঙ্গে হেলেন গেলেন পারকিন্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য ব্লাইন্ড, বোস্টনে।সেখানে প্রথমবারের মতো সে দেখল তার মতো অন্য অন্ধ-বধির শিশুদের।
তার জীবন তখন থেকে এক নতুন পথে এগোতে শুরু করল।
বছর কয়েক পর, ১৮৯৪ সালে, সে ভর্তি হলো রাইট-হিউমসন স্কুল ফর দ্য ডেফ-এ, নিউ ইয়র্কে।
অ্যানি সুলিভান তার ছায়ার মতো সঙ্গে রইলেন—
তিনি মুখের চলন ছুঁয়ে ছুঁয়ে শেখাতেন হেলেনকে কীভাবে মানুষ কথা বলে।হেলেন শিখে ফেলল ঠোঁট পড়া, কথা বলা, এমনকি লেখালেখিও।
তারপর এলো ১৯০০ সাল।২০ বছর বয়সে হেলেন ভর্তি হলো র্যাডক্লিফ কলেজ-এ (হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অংশ)।এখানেই সে জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়- ক্লাসে কেউ কথা বলছে, কিন্তু সে শুনতে পায় না; বইগুলো ব্রেইলে নেই, তাই অ্যানি প্রতিটি বই হাতের স্পর্শে লিখে দিতেন হেলেনকে পড়ার জন্য। অ্যানি দিন-রাত বসে থাকতেন—এক হাতে বই, আরেক হাতে হেলেনের আঙুলে অক্ষর আঁকছেন।
তাদের এই অদ্ভুত কিন্তু অনন্য বন্ধনের ফল মিলল ১৯০৪ সালে — যখন হেলেন কেলার “স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারী প্রথম দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি” হিসেবে ইতিহাস গড়লেন। তার হাতে ডিগ্রির সার্টিফিকেট, আর পাশে অ্যানি সুলিভান—দুজনের চোখে জল। এ ছিল একসাথে লড়া দুটি আত্মার জয়।
পরবর্তী দশকে তিনি হলেন বক্তা, সমাজকর্মী, নারী অধিকার ও প্রতিবন্ধী মানুষের শিক্ষার প্রবক্তা।
ব্রেইল পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে তিনি দেশ-দেশান্তর ভ্রমণ করেন— এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা—প্রতিটি মহাদেশে তিনি ছিলেন “আলো ছড়ানো এক নারী”।
“অন্ধত্ব মানুষকে দৃষ্টিহীন করে, কিন্তু আশাহীনতা মানুষকে আত্মাহীন করে তোলে।”অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা তার এই যাত্রা আজও মনে করিয়ে দেয় —দেহের সীমা যত বড়ই হোক, মনের শক্তি তার চেয়ে বড়।
হেলেন কেলারের জীবনের আসল দীপ্তি শুরু হয়েছিল স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর—যখন সে নিজের সীমা পেরিয়ে, অন্যদের জীবনে আলো জ্বালাতে বেরিয়ে পড়েছিল। তার লক্ষ্য তখন শুধু নিজের উন্নতি নয়, বরং বিশ্বের প্রতিটি অন্ধ ও বধির মানুষের জন্য শিক্ষা, আশা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা।
১৯০৩ সালে প্রকাশিত “The Story of My Life” বইটি তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়।
পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ এই বই পড়ে বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যায়—যে মেয়ে দেখতে ও শুনতে পায় না, সে কীভাবে এত সুন্দরভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছে!এরপর থেকে হেলেনের জীবন হয়ে ওঠে এক যাযাবর অনুপ্রেরণার ভ্রমণ।
১৯১৫ সালে, তিনি গঠন করেন Helen Keller International (HKI) —একটি সংগঠন যা কাজ করে অন্ধত্ব প্রতিরোধ ও দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য।
এখনও পর্যন্ত এই সংস্থা বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশে কাজ করছে।
একই সময়, তিনি American Foundation for the Blind (AFB)-এর মুখপাত্র হন।তিনি সারা আমেরিকা ঘুরে বক্তৃতা দেন, অনুদান সংগ্রহ করেন,আর মানুষকে শেখান—“প্রতিবন্ধকতা শরীরে নয়, মনের ভিতরেই আসল অন্ধকার লুকিয়ে থাকে।”
১৯২০ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত প্রায় তিন দশক হেলেন সারা পৃথিবী ভ্রমণ করেছেন— ৩৫টিরও বেশি দেশ, যার মধ্যে ছিল জাপান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, মিশর, ও ইউরোপের বহু দেশ।
তিনি সাক্ষাৎ করেছেন রাজা-রানী, প্রধানমন্ত্রী, বিজ্ঞানী, লেখক ও সাধারণ মানুষদের সঙ্গে।
প্রতিটি স্থানে তিনি নিজের গল্প বলতেন না—বলতেন আশার গল্প।
১৯৪৮ সালে, যখন তিনি ভারত সফরে এলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু নিজে তাকে অভ্যর্থনা জানান। হেলেন সেখানে অন্ধ শিশুদের স্কুলে গিয়ে তাদের হাত ধরে বলেন,“তোমাদের চোখে আলো না থাকলেও, তোমাদের হৃদয়েই সূর্য লুকিয়ে আছে।” এই কথাগুলো শুনে উপস্থিত সবাই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে।
বয়স বাড়লেও তার মনোবল কমেনি। যখন শরীর দুর্বল, তখনও তিনি লিখতেন, বক্তৃতা দিতেন, সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতেন।
১৯৬৪ সালে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন তাকে দেন দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান—
“Presidential Medal of Freedom”।এটি ছিল মানবতার প্রতি তার অবদানের এক স্বীকৃতি।
১৯৬৮ সালের ১ জুন, তিনি ৮৭ বছর বয়সে শান্তিপূর্ণভাবে পৃথিবীকে বিদায় জানান।
তার মৃত্যুর পরও তিনি রয়ে গেছেন এক অমর প্রতীক—অন্ধকারে থেকেও কীভাবে আলোকিত হওয়া যায়, সেই শিক্ষা দিয়েছেন তিনি সারা মানবজাতিকে।
শেষ পর্যন্ত হেলেন কেলার প্রমাণ করে গেছেন— “জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি অন্ধত্ব নয়, বরং দৃষ্টিসম্পন্ন হয়েও আশাহীন থাকা।”
হেলেন ছোটবেলা থেকেই অন্ধ ও বধির ছিলেন।
তবু তিনি কখনো নিজের ভাগ্যের কাছে হার মানেননি।যে মানুষ দেখতে বা শুনতে পায় না, তার পক্ষে লেখা, পড়া, কথা বলা—সবই যেন অসম্ভব এক কাজ।কিন্তু হেলেন কেলারের জীবনে “অসম্ভব” শব্দটির জায়গা ছিল না।তিনি নিজেই বলেছিলেন—” সুখের এক দরজা বন্ধ হলেও আরেকটি দরজা খুলে যায়— আমরা শুধু সেটা খুঁজে পেতে জানতে পারি না।
যখন অনেকেই ছোট্ট একটি ব্যর্থতায় ভেঙে পড়ে,
হেলেন সেখানে বারবার ব্যর্থ হয়ে আবারও উঠে দাঁড়িয়েছেন। এক অন্ধ মেয়ে ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষা নিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন, বই লিখেছেন, বিশ্বজুড়ে বক্তৃতা দিয়েছেন।এই দৃঢ়তা শেখায়—“অধ্যবসায়ই সাফল্যের মেরুদণ্ড।”
যে হার মানে না, তাকেই একদিন পৃথিবী সম্মান জানায়।
হেলেনের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন শুধু লেখা বা বক্তৃতা নয়, বরং “যোগাযোগের শক্তি”র আবিষ্কার।তিনি দেখিয়েছেন,শব্দ না থাকলেও “মন” যদি স্পর্শ করতে পারে, তবেই যোগাযোগ সম্পূর্ণ হয়।তার শিক্ষক অ্যানি সুলিভান হাতের স্পর্শে হেলেনের চোখ খুলে দিয়েছিলেন—আর হেলেন সারা পৃথিবীর হৃদয় খুলে দিয়েছিলেন।
হেলেন কেলার কেবল নিজের জীবনের অন্ধকার জয় করেননি, তিনি লড়েছেন লাখো প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকারের জন্য। তিনি বিশ্বাস করতেন— মানবতার আলো ভাগ করলে তা কখনও কমে না, বরং বাড়ে। তাই তিনি বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন, অন্ধদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, মানুষকে শিখিয়েছেন— “Blindness is not the tragedy; the real tragedy is having eyes and not seeing.”
বিশ্বজুড়ে যখন নারীরা পিছিয়ে ছিল, তখন হেলেন প্রমাণ করেছিলেন— নারীর সীমা কেবল সমাজের ধারণায়, বাস্তবে নয়। তিনি একাধারে লেখক, বক্তা, সমাজকর্মী, এবং মানবতার দূত।তার জীবন শেখায়— একজন নারী চাইলে বিশ্বকেই বদলে দিতে পারে।
তিনি প্রমাণ করে গেছেন— অন্ধকার যত গভীরই হোক, একটি ছোট্ট আলোই তাকে ভেদ করে যেতে পারে। হেলেন কেলারের জীবন কেবল এক নারীর গল্প নয়, এটি এক মানবিক জাগরণের ইতিহাস।তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় শেখায়—“প্রতিবন্ধকতা নয়, মানসিক