ঝড়ের মধ্যে সুতোর টান: বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের বিদ্যুৎ আবিষ্কারের গল্প

12 Oct 2025 11:55:56 AM

ঝড়ের মধ্যে সুতোর টান: বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের বিদ্যুৎ আবিষ্কারের গল্প

  • মোঃ জয়নাল আবেদীন 

 

১৭০৬ সালের ফিলাডেলফিয়ার ছোট্ট ঘরে, জন্ম নিল এক ছেলে—বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিন।তার বাবা ছিলেন জোশুয়া ফ্র্যাঙ্কলিন, একজন সাধারণ কিন্তু পরিশ্রমী মুদ্রক।জোশুয়া ছিলেন কঠোর এবং নিয়মশৃঙ্খলাপ্রিয়। সে সবসময় শিখাত সন্তানদের—কঠোর পরিশ্রম ছাড়া জীবনে কোনো সাফল্য আসে না।

তার ছোট্ট ছেলের কৌতূহলকে প্রথমে সে লক্ষ্য করত, মাঝে মাঝে চিন্তিতও হতো—“এত কৌতূহল, কিন্তু কি হবে এর ফল?”

মা ছিলেন অ্যাবিগেইল ফ্র্যাঙ্কলিন, শিক্ষিত ও কোমল মনের নারী।ছেলেটির কণ্ঠ, কল্পনা এবং স্বপ্নের প্রতি তার ছিল অনুপ্রেরণা।ছোট বেনজামিন যখন ঘরে বসে ঘুড়ি বানাত, ছোট যন্ত্র পরীক্ষা করত, মা সবসময় পাশে দাঁড়িয়ে তাকে উৎসাহ দিতেন।মা বলতেন,“বাবা কঠোর হতে পারেন, বেন, কিন্তু তোমার স্বপ্ন আর কল্পনা রাখো।”

ফ্র্যাঙ্কলিনের বাবা-মায়ের এই সমন্বয়—কঠোর শৃঙ্খলা আর মমতার মিশ্রণ—ছেলেটিকে গড়ে তুলল এক সৎ, পরিশ্রমী, এবং কৌতূহলী মন।
ছোট বেনজামিন শিখেছিলো কেবল বই পড়া নয়,
প্রকৃতির রহস্য, মানুষ এবং জীবনের প্রতি কৌতূহলও জীবনকে এগিয়ে নেয়।

যদি বাবা জোর দিয়ে শৃঙ্খলা শিখাতেন,
মা শিখাতেন স্বপ্নের মানে—তাই ছোট বেনজামিন সবসময় পরীক্ষা করতে, কল্পনা করতে, এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের স্বপ্ন দেখত।

এই পরিবারিক পটভূমি, বাবা-মায়ের ভালোবাসা ও শিক্ষা, পরবর্তীতে বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিনকে এক বিখ্যাত বিজ্ঞানী, আবিষ্কারক এবং মানুষকে আলোকিত করার চেষ্টাকারী হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করল।

ফিলাডেলফিয়ার ছোট্ট শহরের এক রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে, ছোট বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিন ছুটে বেড়াত খোলা মাঠে।তার হাতে ছোট্ট ঘুড়ি, চোখে উজ্জ্বল কৌতূহল।ঝড়ের দিন হলে সে বাইরে দাঁড়িয়ে তাকাত আকাশের দিকে, বজ্রপাতের শব্দ শুনত এবং ভাবত—“এই শক্তি কেমন করে কাজ করে? কি করলে আমি এটি ধরতে পারব?”

ছোট বেনজামিনের ঘরে সবসময় ছিল কাগজ, কলম, ছোট ছোট যন্ত্র। প্রতিদিন সে পরীক্ষা করত—নদীর পানি কেমন গতি করে, বাতাস কোন দিকে বইছে, ঘুড়ি কতদূর উড়ে।প্রতিটি ব্যর্থতা তাকে হতাশ করত না; বরং আরও বেশি উদ্দীপনা দিত।

তার মা অ্যাবিগেইল পাশে বসে তাকে উৎসাহ দিতেন।“বাবা বলবেন, তুমি অনেক প্রশ্ন করো, কিন্তু মনে রেখো, যে কেউ শিখতে চায়, সে সবসময় কিছু খুঁজে পায়।”

বাবা জোশুয়া কঠোর, কিন্তু ন্যায়পরায়ণ ছিলেন।
তিনি বলতেন,“পরিশ্রম ছাড়া কোনো জ্ঞান আসে না, বেনজামিন। তুমি যতই কৌতূহলী হও, নিয়ম মেনে চেষ্টা করো।”

মা ও বাবার এই সমন্বিত শিক্ষা—স্বপ্নের মানে ও কঠোর পরিশ্রম—ছেলেটিকে গড়ে তুলল এক অনুসন্ধিৎসু মন, যা একদিন তাকে পৃথিবীর কাছে বিদ্যুতের রহস্য উদ্ঘাটনকারী হিসেবে পরিচিত করাবে।

ফ্র্যাঙ্কলিনের ছোটবেলা শুধু খেলা নয়, এটি ছিল প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগের, পরীক্ষার, এবং জ্ঞান আহরণের সময়।যতবার ঘুড়ি উড়ে আকাশে, সে অনুভব করত— প্রকৃতির শক্তি মানুষের হাতে ধরা যেতে পারে। ছোট্ট সেই মুহূর্তগুলোই পরবর্তীতে তাকে বিজ্ঞানী, আবিষ্কারক এবং নতুন যুগের পথপ্রদর্শক হিসেবে গড়ে তুলেছিল।

১৭১৮ সালের দিকে বেনজামিন একটু বড় হয়ে পড়ল। তিনি স্থানীয় স্কুলে ভর্তি হলেন।
শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক যখন সংখ্যা বা ভাষা শেখাতেন, বেনজামিন সবসময় প্রশ্ন করত এবং নিজের মত করে পরীক্ষা করত।শিক্ষকরা অবাক—ছেলেটির মধ্যে কৌতূহল, উদ্ভাবন এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সবই স্পষ্ট।

তার পড়াশোনা শুধু বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত না।বাজ্রপাত, বাতাসের প্রবাহ, নদীর পানি—প্রতিটি ঘটনা তার জন্য একটি পরীক্ষাগার। প্রতিদিনের ছোট ছোট জিনিসকে তিনি বিশ্লেষণ করতেন, নোট লিখতেন, চিন্তা করতেন।

১৭২৯–১৭৩০ সালে, বেনজামিন কিশোর থেকে যুবক হতে চলেছে।তখন তিনি বুঝতে পারলেন—তার কৌতূহল ও স্বপ্ন শুধু ব্যক্তিগত নয়, মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে।
প্রকৃতির শক্তিকে ধরার স্বপ্ন তার হৃদয়ে আরও দৃঢ় হয়ে উঠল।

১৭৩১ সালের বসন্তে, বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিন তখন ২৫ বছর বয়সী যুবক।শৈশবের কৌতূহল, ঘুড়ি খেলা, ছোট ছোট পরীক্ষা—সবই এখন পরিণত হয়ে গভীর মননশীলতা ও বিজ্ঞানের আগ্রহ হিসেবে প্রকাশ পাচ্ছে।

ফ্র্যাঙ্কলিনের দিন শুরু হতো বইপড়া, প্রবন্ধ লেখা, নতুন নতুন পরীক্ষা করা দিয়ে।তাকে কখনোই বসে থাকতে দেখা যেত না—মাটির নল বা ধাতব ছোট যন্ত্রের সঙ্গে পরীক্ষা করত,বাতাসের দিক, বিদ্যুতের ছোট খণ্ড, বজ্রের খোঁজ—সব কিছু তার জন্য প্রাকৃতিক পরীক্ষাগার।

১৭৩২–১৭৩৩ সালের দিকে, ফ্র্যাঙ্কলিন প্রকাশনার কাজ শুরু করলেন।তিনি লোকাল সংবাদপত্রে ছোট প্রবন্ধ লিখতেন, যেখানে সাধারণ মানুষের জীবন, বিজ্ঞান, শিক্ষার গুরুত্ব, এবং সমাজের উন্নয়নের কথা তুলে ধরতেন।তার লেখায় স্পষ্টত দেখা যেত, এক কৌতূহলী মন কেবল প্রশ্নই করে না, উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে।

১৭৩৫–১৭৩৬ সালে, ফ্র্যাঙ্কলিন তার প্রথম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালালেন বাতাস ও তাপের উপর।তিনি লক্ষ্য করলেন—বাতাসের গতি, ধোঁয়ার ওঠা, ঘর ও খোলা মাঠের তাপের পার্থক্য।এই পরীক্ষাগুলো তাকে বুঝতে সাহায্য করল, প্রকৃতির প্রতিটি ছোট খেলা বিজ্ঞান এবং আবিষ্কারের পথ তৈরি করে।

১৭৩৮–১৭৩৯ সালের দিকে, বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের মনে জন্ম নিল বিদ্যুতের প্রতি গভীর কৌতূহল।ঝড়ের সময় আকাশে বজ্রপাত দেখলে তার হৃদয় দ্রুত ধুকপুক করত, এবং তিনি ভাবতেন—“এই শক্তি কি মানুষের জন্য ব্যবহারযোগ্য হবে? কেমন করে আমরা আকাশের শক্তিকে ধরতে পারব?”

এই সময়কাল ছিল তার শিক্ষা, কৌতূহল এবং স্বাধীন চিন্তার যুগ।ছোটবেলা ও কৈশোরে শেখা কঠোর পরিশ্রম, মা-বাবার শিক্ষা, ছোট পরীক্ষা—সবই মিলে গড়ে তুলেছিল এক অনুসন্ধিৎসু মন,যা একদিন তাকে বৈদ্যুতিক আবিষ্কারের পথপ্রদর্শক হিসেবে পরিচিত করবে।

১৭৪০ সালের একটি ঝড়ঝাপ্টা দিনে, ফিলাডেলফিয়ার আকাশ কালো মেঘে ঢাকা।
ছোটবেলাতে যা কৌতূহল বীজ হিসেবে বপন হয়েছিল—এখন সেটি পূর্ণ উদ্দীপনায় পরিণত হয়েছে।

বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিন, এখন প্রাপ্তবয়স্ক যুবক, আকাশের বজ্রপাতের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন,“এই শক্তি কি শুধু গর্জনের জন্য, নাকি মানুষের কাজে লাগবে?”

তিনি দিনে দিনে প্রকৃতির ছোট ছোট রহস্য লক্ষ্য করতে থাকলেন।ঝড়ের সময় বাতাস, ঘুমন্ত নদীর ঢেউ, ঘরবাড়ির ধোঁয়া—সবই ছিল তার পরীক্ষাগার।
ফ্র্যাঙ্কলিন লক্ষ্য করলেন, বজ্রপাত একটি অদ্ভুত শক্তি বহন করে, যা মানুষের হাত দিয়ে ধরা সম্ভব হতে পারে।

১৭৪৫ সালের দিকে, বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিন ছোট ছোট যন্ত্র বানাতে শুরু করলেন।
তার ল্যাবরেটরির কোণাগুলোতে ছড়িয়ে ছিল তার তৈরি করা ধাতব তার, ছোট ব্যাটারি, রিসিভার, কাগজের ঘুড়ি, এবং পরীক্ষা করার নানা যন্ত্র।

প্রতিটি যন্ত্র পরীক্ষা করার সময় ঘটত ছোট ছোট ব্যর্থতা। বজ্রের ঝলক ধরা যেত না, তারের সংযোগ ভেঙে যেত, কখনো ধাতব চাবি ঠিকভাবে সাড়া দিত না।কিন্তু ফ্র্যাঙ্কলিন হতাশ হতেন না।তার মনে ছিল এক অদম্য বিশ্বাস:“প্রতিটি ব্যর্থতা আমাকে সফলতার কাছাকাছি নিয়ে যায়। আমি যদি থামি, তবে স্বপ্ন কখনো সত্যি হবে না।”

প্রতিটি ব্যর্থতা তার জন্য একটি শিক্ষার সুযোগ।
সে নোটবুকে লিখত, চিন্তা করত, নতুনভাবে সংযোগ বানাত, আর আবার পরীক্ষা করত।
এই ছোট ছোট চেষ্টা ও ব্যর্থতা একদিন তাকে বৈদ্যুতিক আবিষ্কারের চূড়ান্ত সফলতার পথে নিয়ে যাবে। তিনি নিজেকে বলতেন,“প্রকৃতির শক্তি ধরার চেষ্টা করলেই আমরা নতুন আবিষ্কারের মুখ দেখতে পাব।”

১৭৫০–১৭৫২ সালের দিকে, ফ্র্যাঙ্কলিন প্রস্তুতি নিলেন বিখ্যাত কাগজের ঘুড়ি পরীক্ষার জন্য।ঝড়ের দিনটি নির্বাচিত হলো, বাতাস উত্তেজনাপূর্ণ, আকাশে বজ্রপাতের গর্জন।ফ্র্যাঙ্কলিন এক হাতে ঘুড়ি ধরলেন, আরেক হাতে রিসিভার যুক্ত ধাতব চাবি।চোখে অদম্য সাহস, মনে একটাই লক্ষ্য—প্রকৃতির বিদ্যুৎকে মানুষের হাতে আনা।

এই উত্তেজনাপূর্ণ দিনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিন, তার হাতে কাগজের ঘুড়ি, আর সঙ্গে যুক্ত একটি ছোট ধাতব চাবি।তার চোখে অদম্য সাহস, হৃদয়ে একটাই লক্ষ্য—আকাশের শক্তি মানুষের কাছে আনা।

ফ্র্যাঙ্কলিন ঘুড়িটি উড়ালালেন আকাশে, ধাতব চাবি বাতাসে ঝুলিয়ে।বজ্র গর্জন করল আরও প্রকটভাবে, বাতাস ঘুরপাক খাচ্ছিল।কিন্তু ফ্র্যাঙ্কলিনের চোখে ভয় নেই, শুধু উত্তেজনা।হঠাৎ—সুতোর মাধ্যমে ধাতব চাবিতে বিদ্যুতের ঝলক এসে পৌঁছাল।তিনি অনুভব করলেন, আকাশের বজ্র আসলে বিদ্যুৎ!

ওফিসে দাঁড়িয়ে তার সহকর্মী অবাক হয়ে বলল:“বেনজামিন! আপনি কি দেখলেন? চাবিতে ঝলক!”ফ্র্যাঙ্কলিন নিজেও অবাক, কিন্তু মুখে হাসি, চোখে উজ্জ্বলতা।সে অনুভব করল—প্রকৃতির বজ্র আসলে বিদ্যুৎ, এবং মানুষ এটি ব্যবহার করতে পারবে।

পরবর্তী কয়েক মাসে, তিনি একই পরীক্ষা বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে পুনরায় চালালেন।প্রতিটি সফল পরীক্ষা তার বিশ্বাস আরও শক্ত করল। ফ্র্যাঙ্কলিন লিখলেন: “প্রকৃতির শক্তি, যা আমরা এতদিন কেবল ভয় দিয়ে দেখতাম, এখন মানুষের কাজে লাগবে। মানুষ যদি সাহস রাখে, তবে আকাশের শক্তি ধরার সম্ভাবনা রয়েছে।”

এই এক পরীক্ষাই ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে গেল।একটি ছোট কাগজের ঘুড়ি, একটি ধাতব চাবি এবং এক সাহসী বিজ্ঞানীর কৌতূহল—
সব মিলিয়ে জন্ম দিল মানব ইতিহাসের প্রথম বৈদ্যুতিক আবিষ্কার।

১৭৫২ সালের সেই ঝড়ঝাপ্টা দিনে কাগজের ঘুড়ি পরীক্ষা সফল হওয়ার পর, ফ্র্যাঙ্কলিনের জীবন এক নতুন যাত্রা শুরু করল।বিদ্যুতের রহস্য উদঘাটন করা মাত্র তার কৌতূহল শেষ হয়নি— বরং এখন তাকে মানুষকে আলোকিত করা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হয়েছিল।

ফ্র্যাঙ্কলিন শুধুমাত্র বিজ্ঞানী ছিলেন না; তিনি সমাজের প্রতিও গভীর চিন্তাশীল। ১৭৫৩ সালের দিকে তিনি ফিলাডেলফিয়ায় গ্রন্থাগার, স্কুল ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে সাহায্য করলেন।তিনি মানুষের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য নানা প্রবন্ধ লিখলেন, আলোচনা করলেন, নতুন ধারণা উপস্থাপন করলেন।

তার জীবন কেবল বিজ্ঞান ও সমাজসেবায় সীমাবদ্ধ থাকল না। ১৭৭৬ সালে, আমেরিকার স্বাধীনতার যুদ্ধ চলাকালীন, ফ্র্যাঙ্কলিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করতে লন্ডনে গেলেন। তিনি ছিলেন শান্তি ও কূটনীতির পথপ্রদর্শক, বিদেশে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখলেন।

তার বৈদ্যুতিক পরীক্ষা এবং গবেষণা ভবিষ্যতের জন্য আলোকের পথ খুলে দিল।বৈদ্যুতিক যন্ত্র, লাইটিং সিস্টেম, শহরের উন্নয়ন—সবই তার চিন্তা ও আবিষ্কারের ফল।ফ্র্যাঙ্কলিন প্রমাণ করলেন, প্রকৃতির শক্তি মানুষের উপকারে আসতে পারে যদি ধৈর্য, উদ্ভাবন ও সাহস থাকে।

১৭৯০ সালের ১৭ এপ্রিল, ফ্র্যাঙ্কলিন ফিলাডেলফিয়ায় শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস নিলেন।
তার জীবন ছিল কৌতূহল, সাহস, উদ্ভাবন এবং মানুষের কল্যাণের গল্প।বিদ্যুৎ, বিজ্ঞান, সমাজসেবা, শিক্ষা— সবক্ষেত্রে তার অবদান অনন্য।

১৭৫২ সালের কাগজের ঘুড়ি পরীক্ষা থেকে বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিন প্রমাণকরেছিলেন—আকাশের বজ্র আসলে বিদ্যুৎ।ছোট্ট সেই পরীক্ষার ঝলক ধীরে ধীরে মানব ইতিহাসকে আলোকিত করার যাত্রা শুরু করল।

ফ্র্যাঙ্কলিন তার জীবনে দেখালেন—কৌতূহল, উদ্ভাবন এবং সাহস মিললে প্রাকৃতিক শক্তিও মানুষের কাজে আসতে পারে।তার এই আবিষ্কার অনুপ্রাণিত করল নতুন নতুন বিজ্ঞানী এবং উদ্ভাবককে।১৯ শতকের মাঝামাঝি, মাইকেল ফারাডে, থমাস এডিসন এবং নিকোলা টেসলা এর মতো বিজ্ঞানীরা ফ্র্যাঙ্কলিনের পথ অনুসরণ করে বিদ্যুতের ব্যবহারিক উন্নয়ন শুরু করলেন।

১৮৭০–১৮৮০ সালের দিকে, প্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলো শহরের গুরুত্বপূর্ণ ভবনে।রাস্তা আলোকিত হলো, কলকারখানায় মেশিন চলল বিদ্যুতের শক্তিতে।মানুষ অবাক—একটা সময় শুধু কল্পনার মতো মনে হওয়া আকাশের শক্তি এখন তাদের ঘরে পৌঁছে গেছে।

১৯ শতকের শেষভাগে, বিদ্যুৎ কেবল শহর নয়, গ্রামেও পৌঁছাতে শুরু করল।ঘরে বসে মানুষ আনন্দে বলত:“রাতের অন্ধকার এখন আর ভয়ঙ্কর নয়। ঘরে আলো, কলকারখানায় আলো—সবই বিদ্যুতের জাদু।”

ফ্র্যাঙ্কলিন যদি দেখতেন, সে হয়তো হেসে বলতেন— “ছোট্ট ঘুড়ি আর একটি চাবি—এই স্বপ্ন কখনো সত্যি হবে তা কল্পনা করতে পারিনি। কিন্তু সাহস ও কৌতূহল সবকিছুর শুরু।”

ফ্র্যাঙ্কলিনের অনুপ্রেরণায় মানুষ কেবল বিদ্যুৎ আবিষ্কার করল না, বরং এটিকে মানুষের জীবনে ব্যবহার করার পদ্ধতি আবিষ্কার করল। বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে পৌঁছল—শহর, গ্রাম, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, কলকারখানা—সবখানে। এভাবে, ফ্র্যাঙ্কলিনের ছোট্ট কৌতূহল এবং সাহস ধীরে ধীরে পুরো পৃথিবীকে আলোকিত করল।