লেবুর শরবত বিক্রেতা থেকে বিশ্বের একনম্বর ধনী ব্যক্তি হওয়ার গল্প

06 Oct 2025 11:07:59 PM

লেবুর শরবত বিক্রেতা থেকে বিশ্বের একনম্বর ধনী ব্যক্তি হওয়ার গল্প

  • মোঃ জয়নাল আবেদীন 

১৯৩০ সালের ৩০ আগস্ট, নেব্রাস্কার ওমাহা শহরে জন্ম নেন ছোট্ট এক শিশু—যার নাম রাখা হয় ওয়ারেন এডওয়ার্ড বাফেট। বাইরের দুনিয়ায় তখন মহামন্দার সময়,মার্কিন অর্থনীতি ভীষণ দুরবস্থায়,
কিন্তু এই ছোট্ট শিশুটি একদিন বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি হবে— কে জানত তখন?

ওয়ারেনের বাবা হাওয়ার্ড বাফেট ছিলেন একজন স্টকব্রোকার, অর্থাৎ শেয়ারবাজারে কাজ করতেন।
কিন্তু তিনি শুধু ব্যবসায়ী ছিলেন না, ছিলেন একজন অত্যন্ত নীতিবান ও আদর্শবান মানুষ। ওয়ারেন পরে বলেছিলেন— “আমার বাবা ছিলেন আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষক।তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন – নিজের পথে চল, যদিও সেটি সবচেয়ে কঠিন।”

ওয়ারেনের মা লেইলা স্টাল বাফেট ছিলেন একজন গৃহিণী, কিন্তু তাঁর মানসিক শক্তি ছিল অসাধারণ।
অর্থনৈতিক মন্দার সময় পরিবারে যখন খাবারের টেবিলে পর্যাপ্ত খাবার থাকত না, তখন লেইলা নিজের খাবার বাচ্চাদের জন্য তুলে রাখতেন।

শৈশবেই সে টের পেয়েছিল—অর্থ উপার্জন মানে শুধু ভাগ্য নয়, তা একধরনের বুদ্ধি ও ধৈর্যের খেলা।

ছোটবেলা থেকেই তাঁর মাথায় ব্যবসার বুদ্ধি ছিল অসাধারণ।তিনি যখন মাত্র ৬ বছর বয়সী, তখনই শুরু করেন তাঁর প্রথম ছোট্ট ব্যবসা।একদিন গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে, ওয়ারেন ভাবল— "মানুষ তো গরমে ঠান্ডা কিছু খেতে চায়, যদি আমি লেবুর শরবত বিক্রি করি?"

তখন সে নিজের হাতেই বানাল লেমোনেড (lemonade) —  মা দিলেন কিছু চিনি, লেবু আর গ্লাস। ওয়ারেন বাড়ির সামনে ছোট্ট টেবিল পেতে বসাল দোকান। প্রতি গ্লাস শরবতের দাম রাখল ৫ সেন্ট।

এভাবে নিজেই বাজারে গিয়ে লেবু কিনত, চিনির দাম হিসাব করত, আর খরচ বাদ দিয়ে লাভ কত হলো তা লিখে রাখত ছোট্ট নোটবুকে। বন্ধুরা যখন খেলায় মেতে থাকত, সে তখন ভাবত—“কিভাবে আরও বেশি মানুষকে লিমোনেড বিক্রি করা যায়?”

প্রথম দিনই সে বেশ কয়েক গ্লাস বিক্রি করল।
তারপর কিছুদিন পর নিজের বন্ধুকেও কাজে নিল—
একজন শরবত বানাতো, আরেকজন বিক্রি করত।
ছোট্ট বাফেট তখনই শিখে ফেলেছিল, "টিমওয়ার্ক মানেই বেশি লাভ!"

ওয়ারেন পরে বলেছিলেন, “লেবুর শরবত বিক্রি করে আমি শিখেছিলাম— মানুষ কী চায়, কখন চায়, আর কীভাবে তাদের সন্তুষ্ট করলে তারা আবার ফিরে আসে।”এই ছোট্ট অভিজ্ঞতাই তাঁর মধ্যে জন্ম দিয়েছিল ব্যবসার বীজ।

এরপর তিনি পত্রিকা বিক্রি, ব্যবহৃত গলফ বল বিক্রি, এমনকি পিনবল মেশিন ভাড়া দিতেন দোকানে — সবকিছুতেই একটু একটু করে ব্যবসার কৌশল শিখছিলেন।

   দশ বছর বয়সে, সে সকাল সকাল উঠে সংবাদপত্র বিলি করত। প্রতিদিন ভোরে শহরের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তার হাতে ছিল খবরের কাগজ, আর মনে চলত হিসাব— “আজ যদি আমি ৫০ কপি বিক্রি করি, লাভ কত হবে?” প্রতিদিনের ছোট ছোট এই হিসাবই তাকে অর্থনীতির বাস্তব শিক্ষা দিয়েছিল, যা কোনো বই শেখাতে পারেনি।

মাত্র ১১ বছর বয়সে, ওয়ারেনের মনে এক নতুন আগ্রহ জন্ম নিল—শেয়ার বাজার। তার সঞ্চয় থেকে সে কিনল Cities Service Preferred Stock— ৩টি শেয়ার, প্রতি শেয়ার মাত্র ৩৮ ডলার দরে।

কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই দাম নেমে গেল ২৭ ডলারে! অনেকেই হলে ভয় পেত, কিন্তু ওয়ারেন বলল— “আমি দেখব এই খেলা শেষ পর্যন্ত কোথায় যায়।” কয়েক মাস পর শেয়ারের দাম ৪০ ডলারে উঠতেই সে বিক্রি করে দিল— লাভ হয়েছিল মাত্র কয়েক ডলার।কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর, একই শেয়ারের দাম ২০০ ডলারে পৌঁছায়!

সেদিন ছোট্ট ওয়ারেন এক জীবনমুখী শিক্ষা পেল— “অস্থিরতা ক্ষতির পথ, ধৈর্যই প্রকৃত শক্তি।”

 ১৯৪৭ সালে, ১৭ বছর বয়সী ওয়ারেন উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বন্ধুরা যখন ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভ্রান্ত, ওয়ারেন তখন জানত তার পথ— সে টাকা কামাতে চায় না, সে অর্থকে বুঝতে চায়।এই কৌতূহলী, অধ্যবসায়ী ছেলেটিই একদিন প্রমাণ করবে—“ধৈর্য ও জ্ঞান একসাথে মিললে, সাফল্য শুধু সময়ের অপেক্ষা।”

১৯৪৭ সাল। মাত্র ১৭ বছর বয়সে, ওয়ারেন বাফেট ওমাহা থেকে বেরিয়ে এলেন এক নতুন স্বপ্ন নিয়ে।
লক্ষ্য – অর্থনীতি ও বিনিয়োগকে গভীরভাবে বোঝা।তিনি ভর্তি হলেন Wharton School, University of Pennsylvania-তে।

কিন্তু প্রথম থেকেই তিনি ছিলেন একটু আলাদা ছাত্র।যখন অন্যরা ক্লাসের বই মুখস্থ করত, ওয়ারেন তখন হিসাব করত— “যদি আমি আজ এক ডলার সঞ্চয় করি, ২০ বছর পর তা কত হবে?” তাঁর সহপাঠীরা ভাবত, “ওয়ারেন সবসময় টাকা নিয়েই ভাবে!” কিন্তু সেই চিন্তাই ছিল তাঁর ভবিষ্যৎ সাম্রাজ্যের বীজ।

১৯৫১ সালে, তিনি ভর্তি হলেন Columbia Business School-এ। সেখানে তাঁর দেখা হলো তাঁর জীবনের অন্যতম প্রভাবশালী শিক্ষক— বেনজামিন গ্রাহাম, যিনি “The Intelligent Investor” বইয়ের লেখক।প্রথম ক্লাসেই বাফেট বুঝলেন, “এ মানুষটাই আমার জীবনের পথপ্রদর্শক।”

গ্রাহামের কাছ থেকেই তিনি শেখেন “Value Investing” এর দর্শন— অর্থাৎ, যে কোম্পানি বাজারে অবমূল্যায়িত, তাতেই বিনিয়োগ করো এবং ধৈর্য ধরো। এই এক দর্শন পরবর্তীতে তাকে বিশ্বের সবচেয়ে সফল বিনিয়োগকারী বানিয়েছিল।

১৯৫৪ সালে, ২৪ বছর বয়সে ওয়ারেন বাফেট চাকরি পান তার প্রিয় শিক্ষক বেনজামিন গ্রাহামের গ্রাহাম-নিউম্যান ইনভেস্টমেন্ট ফার্মে। এটি ছিল তার জীবনের প্রথম বিনিয়োগ সংক্রান্ত চাকরি।
সেখানে তিনি দিনরাত কাজ করতেন, বাজারের প্রতিটি ওঠানামা লক্ষ্য করতেন, আর শিখতেন “বিনিয়োগ মানে সংখ্যা নয়, মানসিকতা।”

তবে ২ বছর পর, ১৯৫৬ সালে, গ্রাহাম অবসর নিলে ফার্মটি বন্ধ হয়ে যায়। তখন বাফেট এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন—  চাকরি ছেড়ে নিজের পথে হাঁটবেন।১৯৫৬ সালের মে মাসে, নিজের জন্মশহর ওমাহায় ফিরে এসে ওয়ারেন বাফেট শুরু করলেন তার প্রথম প্রতিষ্ঠান —  Buffett Partnership Ltd.
প্রাথমিক মূলধন?  মাত্র ১,০০,০০০ ডলার, যা তিনি পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন।

তিনি তখনও জানতেন না, এই ছোট্ট সূচনা একদিন পৃথিবীর সবচেয়ে সফল বিনিয়োগ সাম্রাজ্যে পরিণত হবে।  তিনি বলেছিলেন— “আমি ধনী হতে চাই না, আমি সঠিক হতে চাই।” এবং তাঁর সঠিক সিদ্ধান্তই পরবর্তীতে তাঁকে বিলিয়নিয়ার ও কিংবদন্তি করে তুলেছিল।

  ১৯৫৭ সাল। মাত্র ২৬ বছর বয়সী ওয়ারেন বাফেট তখন ওমাহার এক ছোট ঘরে নিজের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান Buffett Partnership Ltd. পরিচালনা করছেন। মূলধন মাত্র ১,০০,০০০ ডলার, সাতজন অংশীদার, আর অগাধ আত্মবিশ্বাস।

দিনরাত বাজার পর্যবেক্ষণ, ব্যালান্স শিট বিশ্লেষণ, কোম্পানির ভিতরের মূল্য খুঁজে বের করা— এগুলোই ছিল তাঁর প্রতিদিনের কাজ। বন্ধুরা বলত, “ওয়ারেন যেন সংখ্যার সঙ্গে কথা বলে!”এভাবেই ধীরে ধীরে, তাঁর পার্টনারশিপ কোম্পানির সম্পদ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

১৯৬২ সাল। ওয়ারেন বাফেট তখন নতুন এক কোম্পানির দিকে নজর দেন — Berkshire Hathaway, একটি টেক্সটাইল মিল। কোম্পানিটি তখন ক্ষতির মুখে, কিন্তু ওয়ারেন দেখলেন সেখানে “মূল্যবান সম্পদ” লুকিয়ে আছে।তিনি বললেন,“যখন সবাই ভয় পায়, তখনই সুযোগ জন্ম নেয়।”

বাফেট কোম্পানির শেয়ার কিনতে শুরু করলেন— একটু একটু করে।১৯৬৫ সালে, তিনি কোম্পানির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিলেন। এভাবেই একটি ব্যর্থ টেক্সটাইল কোম্পানি হয়ে উঠল ওয়ারেন বাফেটের বিনিয়োগ সাম্রাজ্যের ভিত্তি।

বাফেট বুঝেছিলেন, টেক্সটাইলের যুগ শেষ, কিন্তু বিনিয়োগের যুগ শুরু। তিনি ধীরে ধীরে কোম্পানিটিকে রূপান্তরিত করলেন একটি হোল্ডিং কোম্পানিতে, যা অন্য সফল ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে।

তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও বিশ্লেষণক্ষমতা তাঁকে এমন সব কোম্পানির শেয়ার কিনতে সাহায্য করল যেগুলো পরবর্তীতে আকাশচুম্বী সাফল্য অর্জন করে— যেমন Coca-Cola, American Express, Washington Post, এবং আরও অনেক।তখন থেকেই বাফেটের নাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে “ওমাহার ওরাকল” (Oracle of Omaha) হিসেবে।

এই সময় যুক্তরাষ্ট্রে বাজারের অস্থিরতা, তেলের সংকট, মুদ্রাস্ফীতি— কিন্তু ওয়ারেন বাফেট কখনও বিচলিত হননি। তিনি বলতেন—“বাজার সাময়িক, কিন্তু ব্যবসা স্থায়ী।” যখন অন্যরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করছিল, তিনি তখন বিনিয়োগ করছিলেন।
ফলাফল? কিছু বছরের মধ্যেই তাঁর প্রতিষ্ঠান লাভের পাহাড়ে পরিণত হলো।

১৯৭৫ সালের মধ্যে, ওয়ারেন বাফেট কেবল একজন সফল বিনিয়োগকারীই নন,  বরং এক নতুন দর্শনের জন্মদাতা— “ধৈর্য, বিশ্লেষণ ও মানসিক স্থিরতা হল প্রকৃত বিনিয়োগের চাবিকাঠি।” তার ক্ষুদ্র সূচনা থেকে তৈরি হলো এক বিশাল সাম্রাজ্য, যার নাম আজ বিশ্বের আর্থিক ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা—  Berkshire Hathaway।

১৯৭৬ সাল। আমেরিকার অর্থনীতি তখন চাপে, শেয়ারবাজারে ভয় আর অনিশ্চয়তা। কিন্তু ঠিক সেই সময়, এক শান্ত, আত্মবিশ্বাসী মানুষ তার অফিসের ছোট্ট ডেস্কে বসে কাগজে চোখ রাখলেন—তিনি ওয়ারেন বাফেট, আর তাঁর মাথায় তখন একটাই ভাবনা—“ভয়ের সময়েই সেরা সুযোগ জন্মায়।”

১৯৮০-এর দশক ছিল ওয়ারেন বাফেটের জন্য এক সোনালী অধ্যায়। তিনি একে একে বিনিয়োগ করেন সেইসব কোম্পানিতে, যেগুলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছিল— Coca-Cola, Gillette, American Express, The Washington Post প্রভৃতি।

১৯৮৮ সালে, তিনি Coca-Cola-এর শেয়ার কিনলেন বিশাল পরিমাণে। সবাই অবাক—একটি সফট ড্রিংক কোম্পানিতে এত বিনিয়োগ? বাফেট হাসলেন আর বললেন, “যে পণ্য মানুষ প্রতিদিন ভালোবেসে খায়, সেটাই স্থায়ী ব্যবসা।”

এই সিদ্ধান্ত তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা বিনিয়োগ প্রমাণিত হয়—মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে তাঁর লাভ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

২০০৮ সালে, আর্থিক মন্দার সময়, যখন বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক, তখনও ওয়ারেন বাফেট স্থির। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক ও কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগ করেন। যেমন Goldman Sachs ও Bank of America।সবাই ভয় পেয়েছিল, কিন্তু বাফেট জানতেন—“বাজারে ভয় মানে সুযোগ।”

অল্প কিছু বছরের মধ্যেই তাঁর বিনিয়োগ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।সেই বছরেই তিনি হন বিশ্বের ১ নম্বর ধনী ব্যক্তি—ফোর্বস তালিকায়, নেট মূল্য প্রায় ৬২ বিলিয়ন ডলার।

ওয়ারেন বাফেটের সাফল্যের গল্প শুধু অর্থের নয়,
এটি মানবতারও গল্প। ২০০৬ সালে, তিনি ঘোষণা দিলেন— “আমার সম্পদের ৯৯% মানবকল্যাণে দান করব।” এরপর তিনি Bill & Melinda Gates Foundation-এ ৩০ বিলিয়ন ডলার দান করেন—
যা মানব ইতিহাসে এককভাবে করা সবচেয়ে বড় দানগুলির একটি।

তিনি বিশ্বাস করতেন, “অতিরিক্ত সম্পদ রেখে যাওয়া সমাজের প্রতি অবিচার।”

বয়স বাড়লেও, ওয়ারেন বাফেটের মন এখনো তরুণ। প্রতিদিন সকালে ৮০ বছর বয়সেও অফিসে যান, পছন্দের পানীয় কোকা-কোলা হাতে নিয়ে পত্রিকা পড়েন, আর নতুন বিনিয়োগের চিন্তায় মগ্ন থাকেন।

তিনি বলেন—“সফল বিনিয়োগের জন্য বুদ্ধি নয়, প্রয়োজন ধৈর্য, চরিত্র ও সৎ মানসিকতা।”আজও ওয়ারেন বাফেট পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী মানুষ।তাঁর জীবন প্রমাণ করেছে— ধৈর্য, সততা ও অধ্যবসায় মিললে সাফল্য শুধু নয়, ইতিহাসও লেখা যায়।

ওয়ারেন বাফেটের যাত্রা শুরু হয়েছিল এক কৌতূহলী শিশুর হাতে,যে লেবুর শরবত বিক্রি করত কয়েক সেন্টে।আজ তিনি সেই মানুষ, যার নাম মানে বুদ্ধি, ধৈর্য ও মানবতার প্রতীক। তিনি প্রমাণ করেছেন— “বিনিয়োগ কেবল অর্থের নয়, এটি বিশ্বাস, সময় ও সততার সঠিক ব্যবহারের গল্প।”

ওয়ারেন বলতেন,“বাজারে অস্থিরতা তোমার শত্রু নয়, বরং তোমার ধৈর্য পরীক্ষার উপায়।” যখন অন্য বিনিয়োগকারীরা দ্রুত লাভের আশায় অস্থির হয়ে সিদ্ধান্ত নিত, বাফেট তখন চুপচাপ অপেক্ষা করতেন— ঠিক সময়ের অপেক্ষায়।তিনি জানতেন, যে অপেক্ষা জানে, সাফল্য তার কাছেই আসে।

ওয়ারেন ছোটবেলা থেকেই নিজের শক্তি, দুর্বলতা আর সীমাবদ্ধতা চিনতেন।তিনি বলতেন, “নিজের ওপর বিনিয়োগই সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ।”এই দর্শনই তাকে প্রতিদিন আরও ভালো মানুষ হতে সাহায্য করেছে। তিনি কখনও অন্যের মতো হতে চাননি, তিনি চেয়েছেন নিজের সেরা সংস্করণ হতে।

ওয়ারেন বাফেট বিশ্বের শীর্ষ ধনী হলেও, এখনও তিনি ওমাহার সেই পুরনো বাড়িতেই থাকেন— যেখানে তিনি ১৯৫৮ সালে মাত্র ৩১,৫০০ ডলারে বাড়িটি কিনেছিলেন। তিনি বিলাসিতা নয়, সরলতা ও বাস্তবতাকে গুরুত্ব দেন। তিনি বলতেন, “যে নিজের প্রয়োজন বুঝে চলে, তার জীবনেই শান্তি।”

ওয়ারেনের সবচেয়ে মহান কাজ তাঁর দানশীলতা।
তিনি তাঁর সম্পদের প্রায় ৯৯% দান করার অঙ্গীকার করেছেন। তাঁর মতে,“অতিরিক্ত সম্পদ সমাজের কাছে ফেরত দেওয়া উচিত, কারণ তা আমাদের কাছ থেকেই এসেছে।”এই ভাবনাই তাঁকে শুধু ধনী নয়, মহান মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।

ওয়ারেন সব সময় শান্ত মনের মানুষ ছিলেন।
বাজারে পতন, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, সমালোচনা—
কিছুই তাঁকে বিচলিত করতে পারেনি।
তিনি বলতেন, “ভয় বা লোভ—দুটিই বিনিয়োগ ও জীবনের সবচেয়ে বড় শত্রু।”

 ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারলে, সবচেয়ে বড় ঝড়ও শান্ত হয়ে যায়।তিনি শেখান,জীবনকে লম্বা দৌড় হিসেবে নাও, প্রতিদিন কিছু শেখো,আর সৎ থেকো নিজের কাছে।

তাঁর নিজের কথাতেই যেন তাঁর জীবনের সারমর্ম— “আমি কখনও দ্রুত ধনী হতে চাইনি।
আমি চেয়েছি ধীরে ধীরে, স্থায়ীভাবে সফল হতে।”
যে ব্যক্তি নিজের সময়, ধৈর্য ও নীতিতে বিশ্বাস রাখে— সে-ই একদিন নিজের জীবনের “ওয়ারেন বাফেট” হয়ে ওঠে।