ভুল চাওয়ার আশীর্বাদ
গল্পের নাম: ভুল চাওয়ার আশীর্বাদ
লেখক: মোঃ জয়নাল আবেদীন
একটা ছোট্ট গ্রাম, চারপাশে সবুজ মাঠ, নদী আর শীতল হাওয়ার মাঝে বেড়ে উঠেছিল এক তরুণ—নাম তার সোহান। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল বড় শহরে গিয়ে বড় চাকরি করবে, বড় মানুষ হবে। বাবা-মার কথা প্রায়ই অমান্য করে সে শহরের দিকে ছুটে চলত, স্বপ্ন দেখত গাড়ি-বাড়ির, অর্থ-বিত্তের।
সোহান সবসময় সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করত—
"হে আল্লাহ, আমাকে যেন শহরের সবচেয়ে বড় অফিসার বানান।"
সে ভুলে যেত, জীবনের সব চাওয়া সঠিক না-ও হতে পারে।
একদিন হঠাৎ করেই এক বড় কোম্পানিতে চাকরির অফার এলো। সোহান আনন্দে আত্মহারা! শহরে চলে গেল, বিলাসবহুল জীবন শুরু করল। কয়েক বছর খুব ভালো চলল।
কিন্তু ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারল, শহরের চাকরি মানেই চাপ, মানেই দূরত্ব—পরিবার থেকে, শান্তি থেকে, নিজের আত্মা থেকে।
একটা সময় সবকিছু থাকার পরেও একা লাগতে লাগল। অফিসের রাজনীতি, আত্মীয়স্বজনের অবহেলা, মানসিক চাপ—সব মিলিয়ে সোহান একদিন ভেঙে পড়ল। এদিকে অফিসের হিসাব গড়মিলের দায় তাহার উপর চাপানো হলো। তাকে পুলিশে দেয়া হলো। জামিনে এসে সে আর এই অফিসে জয়েন করেনা। তখন সে বলল,
"হায় হায়, আমি তো যা চেয়েছি, তাই পেয়েছি। কিন্তু এখন বুঝতে পারি, যেটা আমি চাই তা আমার জন্য ভালো ছিল না।"
একদিন ছুটি নিয়ে সে গ্রামের বাড়ি ফিরে এলো। পুরনো পুকুরঘাটে বসে বৃদ্ধ বাবার হাত ধরে বলল,
“বাবা, আমি যা চেয়েছিলাম তা ভুল ছিল। আজ বুঝতে পারছি, জীবনের সবচেয়ে বড় শান্তি তুমি, মা, আর এই প্রাকৃতিক পরিবেশে। আমার ভুল চাওয়ার জন্যই আমি বুঝেছি, সৃষ্টিকর্তা যা দেন, সেটাই আসল আশীর্বাদ।”
তার বাবা হাসলেন। মা চোখে পানি নিয়ে বললেন,
“তুই যা চেয়েছিস তা ভুল ছিল না, কিন্তু তুই বুঝে গেছিস—সেইটাই আসল শিক্ষা।”
এরপর সোহান চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে ফিরে আসে। ছোট একটা স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করে। গ্রামের বাচ্চাদের পড়ায়, মানুষের পাশে থাকে, নিজে লেখাপড়া করে।আর বাড়িতে ব্যাংক ঋণ নিয়ে দুটো গরু দিয়ে খামার শুরু করে। ধীরে ধীরে খামারে গরুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সোহান হয়ে ওঠে গ্রামের সবার প্রিয় মানুষ।
আজ সে বলে—
“আমি ভুল করে যা চেয়েছিলাম, তা না পেলে হয়তো কখনো বুঝতাম না—সৃষ্টিকর্তা ভাগ্যে যা রাখেন, সেটাই আমার জন্য সবচেয়ে ভালো।”
শেষ কথা:
জীবনে আমরা অনেক কিছু চাই ভুলভাবে। কিন্তু শেষমেষ যেটা পাই—তা যদি মন থেকে গ্রহণ করি, তবেই তা আশীর্বাদ হয়ে ওঠে।