লগু পাপে গুরু দন্ড

24 Jul 2025 07:55:42 PM

 

শিরোনাম: লগু পাপে গুরু দন্ড

লেখক: মোঃ জয়নাল আবেদীন

 

সুনামগঞ্জ সদর থানার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে কিছুদিন পূর্বে  ঘটনা ঘটেছে যা আমাদের সমাজের মানসিকতা ও আইনের বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।

 

বন্যাকবলিত এলাকার একটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয় একটি পরিবার, যেখানে কিশোরী মেয়েটি তার পরিবারের সঙ্গে অবস্থান করছিল। একই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছিল তার প্রেমিক ছেলেটিও—নিজের পরিবারের সঙ্গে।

সবার অগোচরে ছেলেটি এক সময় মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে যায়। কিন্তু বিষয়টি মেয়েটির পরিবারের নজরে আসে। তারা ছেলেটিকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন এবং স্থানীয়ভাবে সালিশ করে মীমাংসার চেষ্টা করেন। কিন্তু সমাধান না হওয়ায় থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

পুলিশ এসে আইন অনুযায়ী ছেলেটিকে আটক করে এবং আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। কারণ, মেয়েটির বয়স মাত্র ১৫ বছর। আইন অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বা শারীরিক সংস্পর্শ—even সম্মতিতেও—শিশু ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন হিসেবে গণ্য হয়।

 

সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো—মেয়ের পরিবার অভিযোগে ছেলেটির সঙ্গে সম্পর্কের কথা গোপন রেখে, সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগ আনে। ফলে, পুরো ঘটনাটি একটি 'প্রেমের সম্পর্ক' থেকে সরাসরি 'অপরাধে' পরিণত হয়।

 

“বেরসিক পুলিশ” না কি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী?

অনেকেই বলছেন—“এমন দুর্যোগের সময়ও পুলিশ প্রেমের বিচার করছে? এত বেরসিক কেন?”
কিন্তু এখানে বাস্তবতা হলো—পুলিশ কোন ইচ্ছামতো কাজ করেনি। তারা আইন অনুযায়ী কাজ করেছে। এক্ষেত্রে পুলিশ নয়, আইনই কঠোর।

আমাদের দেশে যেকোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের নিচে) মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক—তা সম্মতিতেও হোক না কেন—শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। সুতরাং, ছেলেটির গ্রেফতার আইন মোতাবেক সঠিক।

 

সমাজের দায় কোথায়?

প্রেম-ভালোবাসা আজকের সমাজে নতুন কিছু নয়। কিন্তু কিশোর-কিশোরীদের এ বিষয়ে কোনো সঠিক দিকনির্দেশনা নেই। পরিবার, স্কুল, সমাজ কেউই এই স্পর্শকাতর বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করে না।
ফলে, সম্পর্ক হয় লুকিয়ে, ভাঙন আসে হঠাৎ, আর আইন নামে বজ্রাঘাতের মতো।

 

আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়—অনেক পরিবার সম্মতির সম্পর্ককেও ঢেকে ফেলে “ধর্ষণ” মামলা দিয়ে। এতে একজন কিশোরের জীবন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা তৈরি করে।

 

উপসংহার

আমাদের উচিত এই ধরনের ঘটনার দায় কেবল পুলিশের ওপর চাপিয়ে না দিয়ে সমাজ, পরিবার এবং আইনের কাঠামোর দিকেও তাকানো।


আইন যেমন বাস্তব, তেমনি কঠোর।

প্রেম যেমন স্বাভাবিক, তেমনি দায়িত্বপূর্ণ।

আর পরিবার যেমন অভিভাবক, তেমনি নিরাপত্তার জায়গা হওয়া উচিত।

 

সুতরাং, ছেলেমেয়েদের বয়স বুঝে সম্পর্ক নিয়ে কথা বলা, প্রযুক্তি ও যৌন সচেতনতা শিক্ষা দেওয়া এবং কঠিন সময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোই হওয়া উচিত সমাজের দায়িত্ব।

আর মনে রাখতে হবে—আইনের চোখে আবেগ নয়, তথ্য ও বয়সই আসল। তাই সময় থাকতে সচেতন হওয়া জরুরি।