হতাশা নয়, হোক আশার আলো
হতাশা নয়, হোক আশার আলো
লেখক: মোঃ জয়নাল আবেদীন
আমরা সবাই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে হতাশার মুখোমুখি হই। কারো জন্য সেটা ক্যারিয়ার, কারো জন্য পারিবারিক জীবন, আবার কারো জন্য সমাজের চাপ। কেউ এই হতাশাকে সামলে নিতে পারেন, আবার কেউ ভেঙে পড়েন, হেরে যান নিজের মনেই।
হতাশার পরিণতি কোথায় গড়ায়?
যখন কেউ হতাশ হয়ে পড়ে, তখন তার মনের মধ্যে শুরু হয় একধরনের অস্থিরতা। মস্তিষ্কে তৈরি হয় নেতিবাচক ভাবনার জাল। এসব ভাবনা ধীরে ধীরে প্রভাব ফেলে শরীরেও। বাড়তে থাকে রক্তচাপ, তৈরি হয় স্নায়ুবিক উত্তেজনা, অনেক সময় হার্টের সমস্যাও দেখা দেয়।
আসলে, হতাশা একটা নিঃশব্দ মানসিক ব্যাধি—যা মানুষকে ভেতর থেকে গিলে খায়। আপনি যত বেশি বলবেন, "আমার কিছু হবে না", "সব শেষ", "পোড়া কপাল", ততই আপনি নিজেকে এক অন্ধকার গহ্বরে ঠেলে দিচ্ছেন।
তাড়াহুড়ো প্রবণতা: আমাদের জাতীয় দুর্বলতা
আমরা জাতি হিসেবে খুবই অধৈর্য। আজ বীজ বপন করেই পরদিন ফল চাই। জীবনের প্রতিটি সাফল্য যেন আমাদের কাছে এখনই চাই, এক্ষুণি চাই-এর মতো হয়ে উঠেছে।
এই মানসিকতা হতাশাকে আরও ত্বরান্বিত করে।
একটি পুরনো কৌতুক আছে:
এক ব্যক্তি স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করছিল—
“হে আল্লাহ, আমাকে অমুক জিনিসটি দাও। তাড়াতাড়ি দাও। এক্ষুণি দাও!”
এই ধরনের মানসিকতা আমাদের জীবনে ধৈর্যের জায়গাটা সংকুচিত করে দেয়। অথচ, ধৈর্য্যই হতাশার সবচেয়ে বড় ওষুধ।
নিজের গল্প: বারবার হেরে গিয়েও থামিনি
আমার ব্যক্তিগত জীবনেই আমি প্রথমবারেই সফল হইনি।
প্রথমবার ব্যর্থ, দ্বিতীয়বারও ব্যর্থ, তৃতীয়বারও না।
চতুর্থবার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আমি আজ এই চাকরিতে এসেছি।
যদি আমি সেদিন হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিতাম, তাহলে আজকের আমি—আমি হতে পারতাম না।
এই দেরি হয়তো স্রষ্টার পরিকল্পনারই অংশ ছিল। হয়তো সেই সময় আমি যোগ্য ছিলাম না, কিংবা আরও ভালো কিছু পাওয়ার উপযোগী করে তুলতে সময় নিচ্ছিলেন তিনি।
একটি গল্প: কাজের মধ্যে হারিয়ে গিয়ে শোক ভুলে যাওয়া
একজন লোক তার একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন। সেই লোকের ছোট্ট মেয়েটি একদিন বলল,
“বাবা, আমার জন্য একটা কাঠের নৌকা বানিয়ে দাও।”
লোকটি মেয়ের আবদার রাখতে গিয়ে কাঠ কেটে, রং মিশিয়ে, নিজের হাতে তৈরি করলেন একটি ছোট্ট নৌকা। নৌকা বানাতে বানাতে তিনি খেয়াল করলেন—যতক্ষণ তিনি কাজে ব্যস্ত ছিলেন, পুত্রশোক তাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
সেই দিন থেকে তিনি নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে শুরু করলেন। কারণ, কাজের মধ্যে ডুবে থাকলে মন আর হতাশায় নিমজ্জিত হয় না।
কাজই পারে আপনাকে শোক, হতাশা ও ব্যর্থতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে।
কি করব আমরা?
১. হতাশ হলে থেমে যাব না, বরং একটু সময় নিয়ে আবার উঠে দাঁড়াব।
২. যে কাজ করতে ইচ্ছা নেই, সেই কাজেই মন দেব, কারণ মনের গহিন কষ্ট দূর করতে শারীরিক ব্যস্ততা খুব উপকারী।
৩. নিজেকে বলব—এই ব্যর্থতা চূড়ান্ত নয়, এটা একটা ধাপ।
৪. সব কিছুর মালিক স্রষ্টা। তিনি ঠিক জানেন, কখন কার জন্য কোনটা ভালো।
উপসংহার
জীবনে হতাশা আসবেই। তবে সেটাকে জয় করার মানসিক শক্তিও আমাদের মধ্যেই থাকে। কেউ কেউ সেটা আবিষ্কার করতে পারে, কেউ কেউ চিরকাল নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রাখে। আসুন, আমরা সেই শক্তিকে জাগিয়ে তুলি।
হতাশা নয়, আশার আলোয় ভরে উঠুক প্রতিটি দিন।
সফলতা সময় নিতে পারে, কিন্তু যদি আপনি লড়াই না থামান—জয় নিশ্চিত।
“সফলতা একদিনেই আসে না,
তবে প্রতিদিনের লড়াই একদিন সফলতা বয়ে আনে।”