মাতৃত্ব
গল্পের নাম: মাতৃত্ব
মূল রাশিয়ান গল্প: “Мать” (Mat’) / “মা”
লেখক: ম্যাক্সিম গোর্কি (Maxim Gorky)
প্রকাশকাল: 1906
অনুবাদ ও পুনর্গঠন: মোঃ জয়নাল আবেদীন
ম্যাক্সিম গোর্কি রাশিয়ার একজন বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক, যিনি সাধারণ মানুষের সংগ্রাম ও সাহসিকতাকে তার সাহিত্যে তুলে ধরেছেন। ‘মা’ গল্পটি তার বিখ্যাত রাজনৈতিক উপন্যাস। এটি একটি সাধারণ মায়ের অসাধারণ সাহস ও আত্মত্যাগের কাহিনি। গল্পটি এখানে অনুবাদ করে সাহিত্যিক রূপে উপস্থাপন করা হলো।
১. ছোট্ট ঘরের বিপ্লব
রাশিয়ার এক ছোট্ট শিল্পাঞ্চলে থাকত পেলাগেয়া নামের এক গরিব মা। তার ছেলে, পাভেল, ছিল একটি কারখানার শ্রমিক। পাভেল ধীরে ধীরে বিপ্লবী রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।
পেলাগেয়া প্রথমে ছেলের এসব কর্মকাণ্ড বুঝতে পারত না। সে শুধু চাইত তার ছেলে নিরাপদে থাকুক, খেয়ে-পরে বাঁচুক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে বুঝতে শুরু করে— তার ছেলে কেবল নিজের জন্য নয়, সবার জন্য লড়াই করছে।
২. ভয় আর সাহসের সন্ধিক্ষণে
একদিন পাভেলসহ কয়েকজন যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পেলাগেয়া ভয়ে কেঁপে উঠে, কিন্তু থেমে থাকে না। সে সিদ্ধান্ত নেয়— সে ছেলের পথেই হাঁটবে।
সে মানুষের কাছে যায়, লিফলেট বিলি করে, সভায় বক্তৃতা দেয়। এক সময় সে নিজেই হয়ে ওঠে শ্রমিকদের জন্য অনুপ্রেরণা। এক অসহায়, নিরক্ষর নারী কীভাবে মানুষের মধ্যে সাহস ছড়িয়ে দেয়— এ এক অবিশ্বাস্য রূপান্তর।
৩. মা যখন জাতির প্রতীক
পেলাগেয়ার জীবন ছিল নিঃস্ব, কিন্তু তার মন ছিল সাহসী। তার ‘মাতৃত্ব’ ছিল কেবল রক্তের সম্পর্ক নয়— পুরো জাতিকে আগলে রাখার প্রতীক।
পেলাগেয়া বলে—
“আমার ছেলে একা নয়, হাজারো ছেলে তার মতো। আমি এখন কেবল এক মায়ের কথা বলছি না— আমি সব মায়ের হয়ে কথা বলছি। আমরা ভয় পাব না।”
৪. শেষ যাত্রা
শেষপর্যন্ত পেলাগেয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে সে বলে—
“আমি অপরাধ করেছি, কারণ আমি ভালোবাসতে শিখেছি— সব মানুষকে।”
তার মুখে কোনো ভয় নেই, বরং গর্ব। পেলাগেয়ার আত্মত্যাগ পাভেলের বিপ্লবকে আরও তীব্র করে তোলে। গোটা শহর জেনে যায় এক মায়ের সাহসিকতার কথা।
উপসংহার
গোর্কির ‘মা’ শুধু একটি চরিত্র নয়— এটি একটি প্রতীক। একটি সামাজিক বিপ্লবের মূল অনুপ্রেরণা। এই গল্পে আমরা দেখি— একজন সাধারণ নারী কীভাবে অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে।