শেষ চিঠি
গল্পের নাম: শেষ চিঠি
মূল ভাষা: রাশিয়ান
লেখক: আন্তন পাভলোভিচ চেখভ
অনুবাদ ও রূপান্তর: মোঃ জয়নাল আবেদীন
১. সেই পুরোনো ডাকঘর
সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে, এক পরিত্যক্ত ডাকঘরে কাজ করত ইভান পেত্রোভিচ। বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই। চুল ধূসর, চোখদুটি কুয়াশার মতো।
গত ৪০ বছর ধরে সে মানুষের চিঠি পড়া, গুছিয়ে রাখা, পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত।
কিন্তু এই আধুনিক সময়ে, চিঠি আর কেউ লেখে না। সবাই ফোন করে, মেসেজ পাঠায়। ইভান এখন অলস বসে থাকে। কেউ আর তার দরকার করে না।
২. চিঠির গন্ধ
এক সন্ধ্যায় ইভান দেখতে পায় পুরোনো ট্রাঙ্কের নিচে চাপা পড়া এক অপ্রেরিত চিঠি। তারিখ— ১৯৮৩ সাল।
চিঠির খামে লেখা:
"তোমার কাছে শেষবার লিখছি..."
প্রাপক: এলেনা ইভানোভা
চিঠিটা হাতে নিয়েই কাঁপতে থাকে ইভান। এ তো তার নিজের লেখা!
৩. স্মৃতির দরজা
ইভান ফিরে যায় ৪০ বছর আগে। সে ও এলেনা একে অপরকে ভালোবাসত, কিন্তু সে সাহস করে বলতে পারেনি। চিঠিতে সে লিখেছিল সব— ভালোবাসা, ভাঙা স্বপ্ন, অপেক্ষার যন্ত্রণা। কিন্তু সাহস করে কখনো পাঠায়নি।
চিঠিটা হারিয়ে গিয়েছিল তারই ডাকঘরে।
“তোমার চুলে প্রথম তুষার পড়ার আগেই যদি আমার ভালোবাসা পৌঁছায়, তবে আমি জানব— আমি দেরি করিনি।”
৪. খোঁজ শুরু
পরদিন ইভান বেরিয়ে পড়ে এলেনার খোঁজে। শহরের সব রেকর্ড ঘেঁটে, পুরোনো পরিচিতদের খোঁজে সে জানতে পারে—
এলেনা এখন এক বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। নিঃসন্তান, নিঃসঙ্গ, একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন একসময়।
ইভান কাঁপা হাতে চিঠিটা নিয়ে উপস্থিত হয় বৃদ্ধাশ্রমে। এলেনা তাকে চিনে ফেলেন। চোখে জল জমে দুজনের।
“তুমি যদি একদিন আগে পাঠাতে...”
ইভান হাসে, “তাহলে হয়তো আমরা একসঙ্গে হাঁটতাম। এখন... অন্তত একসঙ্গে বসে থাকতে পারি।”
৫. মানবতার পরিণতি
পরবর্তী কয়েক মাস তারা প্রতিদিন একসঙ্গে বসে চা খায়, পুরোনো কবিতা পড়ে, চুপচাপ জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ইভান বলে,
“আমরা সময় হারিয়েছি ঠিকই, কিন্তু অনুভব তো কখনো দেরি করে না।”
উপসংহার
এই গল্প আমাদের শেখায় —
“সবকিছু বদলায়, কিন্তু ভালোবাসার অপেক্ষা কখনো পুরোনো হয় না।”