ফেসবুক নেশা নয়, হোক জ্ঞানের উৎস!
ফেসবুক নেশা নয়, হোক জ্ঞানের উৎস!
✍️ মোঃ জয়নাল আবেদীন
বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়া যেন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যবহৃত মাধ্যম হলো ফেসবুক। একসময় যা ছিল যোগাযোগের মাধ্যম, আজ তা অনেকের জীবনে সময়ের সবচেয়ে বড় অপচয়কারী।
বিশেষ করে আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম, যারা এখনো ছাত্রজীবনে — তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ফেসবুক আসক্তির কারণে। যেন একবেলা ভাত না খেলেও চলে, কিন্তু মোবাইল ছাড়া এক মুহূর্তও চলে না!
ফেসবুক: শেখার জায়গা না সময় নষ্টের মাঠ?
করোনাভাইরাসের সময় অনলাইন ক্লাসের নাম করে অভিভাবকগণ সন্তানের হাতে মোবাইল তুলে দিয়েছেন নিজ হাতে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, অনেকেই এই সুযোগের সঠিক ব্যবহার করেনি। বরং রাতারাতি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে শুরু হয় এক অনিয়ন্ত্রিত স্ক্রলিংয়ের অভ্যাস।
আজকের একজন ছাত্র দিনের ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রল করেই কাটিয়ে দেয়, অথচ সে জানেও না সে কী খুঁজছে! আপনি যদি তাকে জিজ্ঞেস করেন—
“তুমি ফেসবুক থেকে কী শিখছো?”
সে কোনো উত্তর দিতে পারবে না। কারণ, সে আসলে কিছু শিখছে না—শুধু সময় নষ্ট করছে।
ছাত্রজীবনে ফেসবুকের আসক্তি মানেই ভবিষ্যতের বিনাশ
ছাত্রজীবন একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না। এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান। এই সময়টাতেই একজন মানুষ তার ক্যারিয়ারের ভিত তৈরি করে।
ফেসবুক আসক্তির কারণে,
🔹 অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা থেকে সরে যাচ্ছে
🔹 অনেকেই সময়মতো পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছে না
🔹 কেউ কেউ মানসিক অস্থিরতা ও হতাশায় ভুগছে
এভাবে চলতে থাকলে সামনে একটি হারিয়ে যাওয়া প্রজন্ম দাঁড়াবে আমাদের সামনে, যাদের হাতে থাকবে মোবাইল, কিন্তু মগজে থাকবে শূন্যতা।
অভিভাবকদের করণীয়
অনেক সময় অভিভাবকেরা চাইলেও সন্তানকে মোবাইল থেকে দূরে রাখতে পারেন না। কিন্তু এর জন্য রাগারাগি নয়, দরকার বুদ্ধিদীপ্ত এবং ধৈর্যশীল আচরণ। কিছু কার্যকর পরামর্শ নিচে দেওয়া হলো:
সন্তানের মোবাইল ব্যবহারে সচেতনতামূলক টিপস:
1️⃣ নিজে আগে উদাহরণ হোন:
সন্তানের সামনে নিজে মোবাইল টিপলে, সন্তানও তাই করবে। আগে নিজে নিয়ন্ত্রণে আসুন।
2️⃣ সময় দিন সন্তানকে:
বাচ্চারা একাকীত্বে ভুগলে মোবাইলকে আশ্রয় হিসেবে নেয়। তাদের সঙ্গে সময় কাটান, গল্প করুন, খেলাধুলা করুন।
3️⃣ ধীরে ধীরে অভ্যাস পরিবর্তন করুন:
রাগারাগি করে নয়, ধীরে ধীরে মোবাইল থেকে দূরে রাখতে হবে। সময় বেঁধে দিন, প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ব্যবহার নিষিদ্ধ করুন।
ছাত্রছাত্রী ও তরুণদের জন্য করণীয়
যারা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা কর্মজীবনের প্রস্তুতিমূলক সময়ে রয়েছেন, তাদের জন্য পরামর্শ:
1️⃣ ছাত্রজীবন সময় নয়, সুযোগ:
এই সময়টা ক্যারিয়ার গঠনের শ্রেষ্ঠ সময়। এটা যদি নষ্ট হয়, পুরো জীবনেই তার প্রভাব পড়ে।
2️⃣ ফেসবুক রুটিন করে ব্যবহার করুন:
পুরোপুরি বাদ দিতে না পারলেও নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে ফেসবুক ব্যবহার করুন। নাহলে সময় আপনার জীবনটাকেই খেয়ে ফেলবে।
3️⃣ নিজেকে রোল মডেল বানান:
আপনার ছোট ভাই-বোনেরা আপনাকে দেখে শিখে। তাদের জন্য এমন কিছু রেখে যান, যা তারা অনুসরণ করেও সফল হতে পারে।
উপসংহারঃ
ফেসবুক ব্যবহার করতেই হবে, কিন্তু সেটি যেন জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম হয়, সময় নষ্টের মাধ্যম নয়।
একটি নেশা নয়—বরং একটি দায়িত্বশীল মাধ্যম হিসেবে ফেসবুককে ব্যবহার করুন।
আপনার সময়ই আপনার ভবিষ্যৎ। সেটিকে বাঁচান, নষ্ট নয়।
✍️ লেখক: মোঃ জয়নাল আবেদীন
📖 ব্লগ: jabedin.com
“নিজেকে বদলান, সমাজ বদলাতে শুরু করবে।”