বিরাম চিহ্নের নিয়ম (সপ্তম শ্রেণির জন্য)
বিরাম চিহ্নের নিয়ম(সপ্তম শ্রেণির জন্য)
লেখক: মোঃ জয়নাল আবেদীন
বিরাম চিহ্ন কী?
বিরাম চিহ্ন হলো বাক্যে থামার বা বিরতির জন্য ব্যবহৃত চিহ্ন। এটি বাক্যের অর্থ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
যদি বিরাম চিহ্ন ঠিকভাবে না বসে, তাহলে বাক্যের অর্থ পরিবর্তিত বা বিভ্রান্তিকর হয়ে যেতে পারে।
কেন বিরাম চিহ্ন শেখা দরকার?
✅ বাক্যের অর্থ পরিষ্কার হয়
✅ পাঠ করার সময় ঠিক জায়গায় বিরতি নেওয়া যায়
✅ লেখায় সৌন্দর্য ও শুদ্ধতা আসে
প্রধান বিরাম চিহ্ন ও তাদের বিস্তারিত নিয়ম
১. ✅ পূর্ণচ্ছেদ (।)
ব্যবহার: একটি বাক্য শেষ হলে পূর্ণচ্ছেদ বসে।
উদাহরণ:
আমি স্কুলে যাই।
সে একজন ডাক্তার।
২. প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?)
ব্যবহার: প্রশ্নসূচক বাক্যের শেষে বসে।
উদাহরণ:
তোমার নাম কী?
তুমি কোথায় যাচ্ছো?
৩. আবেগসূচক চিহ্ন (!)
ব্যবহার: আনন্দ, দুঃখ, বিস্ময়, ভয়, আশ্চর্য ইত্যাদি আবেগ প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ:
বাহ! তুমি তো দারুণ করেছ!
হায়! সে মারা গেছে।
৪. কমা (,)
ব্যবহার:
তালিকা দিতে
দুটি বাক্যাংশ আলাদা করতে
বাক্যে ছোট বিরতি দিতে
উদাহরণ:
আমি কলা, আম, লিচু, আর কাঁঠাল খাই।
কাজ শেষ করে, আমি খেলতে গেলাম।
৫. উদ্ধরণ চিহ্ন (“ ”)
ব্যবহার: কারো বলা কথা, কবিতা বা লেখার অংশ উদ্ধৃত করতে।
উদাহরণ:
মা বললেন, “সৎ পথে চলবে।”
কবি লিখেছেন, “এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি।”
৬. ড্যাশ (—)
ব্যবহার:
কোনো কথার মাঝে অতিরিক্ত তথ্য বা জোর দিতে
হঠাৎ থেমে নতুন কিছু যোগ করতে
📌 উদাহরণ:
আমি জানি — তুমি পারবে।
সে আসেনি — যদিও আমরা অপেক্ষা করেছিলাম।
৭. 🔽 দ্বৈত বিন্দু (Colon - :)
👉 ব্যবহার:
তালিকার আগে
কোনো কিছু ব্যাখ্যা করতে
উপসংহার বা উদাহরণ দেয়ার আগে
📌 উদাহরণ:
আমি তিনটি জিনিস ভালোবাসি: বই, গল্প, কবিতা।
তিনি বললেন: “সবার আগে সততা।”
৮. 🔶 সেমিকোলন (Semi-colon - ;)
👉 ব্যবহার: দুটি সম্পর্কযুক্ত বাক্যকে আলাদা করতে, যেখানে কমা যথেষ্ট নয়।
📌 উদাহরণ:
আমি ভালো করে পড়েছি; কিন্তু পরীক্ষায় ভালো ফল হয়নি।
৯. 🔲 বক্র বন্ধনী ( )
👉 ব্যবহার: অতিরিক্ত তথ্য, তারিখ বা ব্যাখ্যা দিতে।
📌 উদাহরণ:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০–১৯৭৫) বাংলাদেশের জাতির পিতা।
🔟 হাইফেন (-)
👉 ব্যবহার:
দুটি শব্দ একসাথে যোগ করতে
যৌগিক শব্দ গঠনে
📌 উদাহরণ:
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ
শিশু-কিশোর মেলা
🧠 মনে রাখার উপায়:
👉 একটি বাক্যে যেখানে থামতে চাই, সেখানে উপযুক্ত বিরাম চিহ্ন বসাতে হবে।
👉 কারো কথা উদ্ধৃত হলে “উদ্ধরণ চিহ্ন” ব্যবহার করতে হবে।
👉 প্রশ্ন করলে প্রশ্নবোধক চিহ্ন, আবেগ প্রকাশ করলে বিস্ময়চিহ্ন দিতে হবে।
🧪 অনুশীলন (খালি জায়গা পূরণ করো):
১. তুমি কোথায় যাচ্ছো ___
২. মা বললেন ___ “সাবধানে থেকো।”
৩. আমি কলা ___ আম ___ কমলা খাই।
৪. বাহ ___ তুমি সত্যিই পারো!
📚 উপসংহার:
বিরাম চিহ্ন লেখাকে শুদ্ধ ও সুন্দর করে তোলে। যেমন শরীরে হাড় না থাকলে শরীর ভেঙে পড়ে, তেমনি বিরাম চিহ্ন ছাড়া বাক্য অস্পষ্ট হয়।