শেষে রইল শূন্য

04 Aug 2025 08:46:30 PM

গল্পের নাম: শেষে রইল শূন্য

লেখক: মোঃ জয়নাল আবেদীন


     মোবারক হোসেন এক সময় ছিল ছোটখাটো সরকারি কর্মকর্তা। মাসে যা বেতন পেতেন, তাতে সংসার চলত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। স্ত্রী তাসলিমা প্রায়ই অভিযোগ করতেন—
“সুযোগ আছে, আর তুমি এত সৎ! আমাদের ছেলের ভবিষ্যৎ দেখো না?”
মোবারক প্রথমদিকে টানাপোড়েনে দিন কাটাতেন। কিন্তু একদিন একজন ঠিকাদার এসে হাসিমুখে বলল—
“স্যার, আপনি শুধু সইটা করে দেন, বাকিটা আমার। সামান্য কৃতজ্ঞতা রইল।”
প্রথমে হাত কাঁপলেও পরে সেটা অভ্যাসে পরিণত হলো।

     দেখতে দেখতে মোবারক একের পর এক প্লট, ফ্ল্যাট, গাড়ি, জমি, ব্যাংক ব্যালান্স— সবকিছু গড়ে তুললেন।
বাড়ির দেয়ালে মার্বেল লাগল, ছেলের ঘরে এসি লাগল, স্ত্রীর জন্য বিদেশি গয়না এল।
মোবারক ভাবলেন—
“আমি যা করছি, সবই তো পরিবারের জন্য। আমার ছেলে আলভি বড় হয়ে রাজা হবে।”

    ছেলে আলভি বিদেশে পড়তে গেল। টাকার অভাব ছিল না, কিন্তু নীতির অভাব ছিল।
সেই টাকায় সে মাদক কিনল, মেয়েদের পেছনে ছুটল, রাত কাটাল ক্লাবে।
দেশে ফেরার পর দেখা গেল— সে এক নেশাগ্রস্ত, দায়িত্বহীন, বেপরোয়া তরুণ।
বাবার মুখের ওপর বলে দিল—
“আমার জন্য কী করেছো তুমি? টাকা দিয়েছো, কিন্তু সময়, শিক্ষা, ভালোবাসা কিছুই করোনি!”
মোবারক স্তব্ধ হয়ে গেল।

      স্ত্রী তাসলিমা আলাদা থাকতে চাইল— বলল,
“তুমি বাড়ি বানিয়েছো, কিন্তু সংসার বানাওনি।”
ঘরে দামী জিনিসে ঠাঁসা, কিন্তু কেউ আর হাসে না।
মোবারক ঘুমাতে পারেন না— রাত জেগে বসে থাকেন ড্রয়িং রুমে, যেখানে ঝাড়বাতি ঝুলে, কিন্তু আলো নেই।

       একদিন মোবারককে বৃদ্ধাবাসে পাঠিয়ে দেয় তার ছেলে—
“তোমার জন্য তো সব করেছি, এখন একটু আমি নিজের মতো থাকতে চাই।”
মোবারক জানালার পাশে বসে থাকেন—
হাতভর্তি আঙুলে সোনার আংটি, কিন্তু কারো হাত ধরে না।
ডায়েরিতে লেখেন—
“সত্যিই, কার জন্য এত কিছু করলাম? আমার ভোগ করলো না, প্রিয়জন কেউ পাশে থাকল না। এখন মনে হয়—
সৎ থাকলে অন্তত মানসিক শান্তি পেতাম।”


উপসংহার: শূন্যতার চিৎকার
গল্পের শেষে মোবারক ডায়েরিতে একটা বাক্য লিখে যান—
“যে সম্পদ সত্যের পথে আসে না, তা সুখ আনতে পারে না।
আর যে সন্তানকে মূল্যবোধ শেখানো হয়নি, তার পেছনে জমি বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই।”

শেষ কথা
এই গল্প শুধু মোবারকের নয় — অনেকের জীবনের প্রতিচ্ছবি।
যারা "পরিবারের জন্য" বলে অন্যায় পথে হাটে, একসময় তারা বুঝে—
পরিবার শুধু টাকা চায় না, তারা সময়, শিক্ষা আর ভালোবাসা চায়।