আত্মহত্যা নয়, সচেতনতাই সমাধান
শিরোনাম: আত্মহত্যা নয়, সচেতনতাই সমাধান
লেখক: মোঃ জয়নাল আবেদীন
ঘটনার শুরুঃ
সুনামগঞ্জ সদর থানার একটি মর্মান্তিক অথচ সচেতনতা-বর্ধক ঘটনার কথা শোনাতে চাই। সুনামগঞ্জ শহরের একটি গার্লস স্কুলের এক ছাত্রী অভিযোগ জানায়, ক্লাস টেনে পড়াকালীন এক ছেলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শুরুতে সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে বুঝতে পারে ছেলেটি মাদকাসক্ত।
মেয়েটি তাকে ভালো পথে ফেরানোর চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে মেয়েটি জানতে পারে ছেলেটি আরেকটি মেয়ের সঙ্গেও সম্পর্কে জড়িত। তখন সাহস করে সে সম্পর্ক থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়।
ব্ল্যাকমেইল ও ভয়ঃ
ছেলেটি সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি। সে মেয়েটিকে বারবার বিরক্ত করতে শুরু করে। হুমকি দেয়, মেয়েটির কিছু অসতর্ক মুহূর্তের ছবি, যা মেসেঞ্জারে ছিল, সেগুলো ভাইরাল করে দেবে। ছবিগুলো সে মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে ভয় দেখায়।
এই অবস্থায় মেয়েটি একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির সাহায্য চায়। তিনি মেয়েটিকে জানান, তার বয়স কম হওয়ায় ঘটনাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে স্পষ্টতই অভিযোগযোগ্য। মামলা করলে আইনের মাধ্যমে অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তি হবে।
ভয়ের অন্ধকারেঃ
কিন্তু তখন মেয়েটি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, “মামলা করলে বাবা-মা সব জানতে পারবেন। আমি লজ্জায় আত্মহত্যা ছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না। তাদের চোখে আমি মুখ দেখাতে পারবো না।”
তখন তাকে একটাই কথা বলা হয়:
"আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আত্মহত্যা মানে জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া। সময় সব সমস্যার সমাধান করে দেয়—শুধু সাহস ধরে রাখতে হয়।"
অভিভাবকদের জন্য বার্তাঃ
প্রিয় পাঠক, আমাদের সমাজে এমন পরিস্থিতিতে বহু মেয়ে নীরবে আতঙ্কের সঙ্গে বেঁচে থাকে, কখনো কেউ সাহস করে বলে, কেউ চুপ করে চোখের জল ফেলে।
আমাদের দায়িত্ব—একজন অভিভাবক, ভাই, বন্ধু বা শিক্ষক হিসেবে তাদের পাশে দাঁড়ানো। সাহস জোগানো, আশ্বস্ত করা। মনে রাখতে হবে—প্রতিটি থানায় এখন নারী ও শিশু সহায়তা ডেস্ক রয়েছে, যেখানে গোপনীয়ভাবে সহায়তা পাওয়া সম্ভব।
আর আমাদের কন্যা সন্তানদের প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতন করতে হবে, সম্পর্ক বিষয়ে সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে তাদের একা ছেড়ে দেওয়া নয়, বরং বোঝাতে হবে—পরিবারই তাদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়।
শেষ ভালো খবরঃ
এই মেয়েটি গত বছর এসএসসি পাস করেছে। বর্তমানে সিলেটের একটি কলেজে পড়ছে। সে আত্মহত্যা করেনি। বরং সময় তাকে ধীরে ধীরে সুস্থ করে তুলেছে। আমরা যদি তার পাশে না দাঁড়াতাম, হয়তো গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো।
উপসংহার
আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। ভয় নয়, সচেতনতা, সাহস এবং পরিবার ও সমাজের সমর্থনই পারে একজন বিপদগ্রস্ত মানুষকে টেনে তুলতে।
সবার উচিত—ভুলকে শাস্তি দেওয়া নয়, দুর্বল মুহূর্তে পাশে দাঁড়ানো।